পঞ্চগড়ের উন্নয়নে কোন দল দেখার দরকার নেই, একসাথে কাজ করাটা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চৌরাস্তা বাজারে ঐতিহাসিক তেঁতুলতলায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় সারজিস বলেন, পঞ্চগড়ের উন্নয়নে কোন দল দেখার দরকার নাই, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এনসিপি বলেন আর ইসলামি দল কিংবা অন্য কোন রাজনৈতিক দল বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করাটা জরুরি। সবাই যদি সবার জায়গা থেকে চেষ্টা করে তেঁতুলিয়াকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিতে পারি, তারপর দলাদলি করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে একটা সমস্যা হচ্ছে, একটা ভালো কাজ হলে কিছু লোকজন আছে, তারা মনে করে তার সুনাম হবে, ক্রেডিট পাবে, তার পেছলে লাগা লাগবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। দিন শেষে ক্ষতিটা সবার জন্যই। দয়া করে এসব করতে যাবেন না।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সারজিস বলেন, আমরা স্পষ্ট করে একটা কথা বলি, ভালো একটা কাজ হচ্ছে সেটার পেছনে কেউ লাগতে যাবেন না। অনুরোধ করবো আপনাদের যাদের সামর্থ আছে নিয়ে আসার, আমরা বিশটা এনেছি, আপনারা একশোটা নিয়ে আসেন। এটা এলাকার উন্নয়নে সবার জন্য ভালো। কারণ ওইখানে আমাদেরই কেউ না কেউ যাবে।
অর্থ বরাদ্দের অনিয়ম ঠেকাতে সারজিস বলেন, সরকারি টাকার যদি কেউ এক টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা কমিটির যদি কেউ এখান থেকে এক টাকা নষ্ট করার চেষ্টা করে, খাওয়ার চেষ্টা করে, পকেটে ঢুকানোর চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধেও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। পঞ্চগড়ের মানুষ এটা চাই না, যার পেটে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জার টাকা ঢুকে।
পর্যটন শিল্প সম্পর্কে সারজিস বলেন, পুরো বাংলাদেশের মানুষ এখন কক্সবাজার ও তেঁতুলিয়ার নাম জানে। এখানে অর্গানিক চা উৎপাদন হচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এজন্য। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে বাইরে থেকে যেসব লোকগুলো আসছে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা। পরিবারের মানুষের চেয়ে ভালো ব্যবহার করা। কারণ উনি যদি একটা ভালো রিভিউ দেন, তাহলে এ জেলায় ১০০ জনের জায়গায় এক হাজার লোক বেশি আসবে। আপনার হোটেলে যাবে, আপনার দোকানে কেনাকাটা করবে, আপনার খাবার খাবে, আপনার হোটেলে থাকবে এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। তাই পর্যটকদের সাথে ভালো ব্যবহার করা।
তিনি আরও বলেন, তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। দয়া করে আমরা যেন এটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখি। ময়লা আবর্জনা যেখানে পড়ে থাকলে পর্যটকরা পছন্দ না করে, আর যদি সোস্যাল মিডিয়ায় বলে কাঞ্চনজঙ্ঘা তো দেখা যায়, কিন্তু পরিবেশ ভালো না তারপরে কিন্তু লোকজন আসবে না। পরিবেশটা সুন্দর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অনুরোধ করি মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা যদি প্রয়োজন হয়, আপনারা তালিকা দিবেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কিন্তু একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।
সরকারি অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে সারজিস বলেন, সরকারি জিনিস একশোটা আসতে যত দিন লাগে যে প্রসেসটা লাগে, একশো কোটির কাজটা ওই একই প্রসেস লাগে। এগুলো হয় অর্থবছর হিসেবে। কোনটা ৬ মাসের প্রসেস, কোনটা এক বছরের প্রসেস। আর যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ব্যবহার করে যেমন রাস্তা থাকে খুব বাজে অবস্থা। এক কিলোমিটার, দুই কিলোমিটার এর চেয়েও বেশি হতে পারে আপনারা সেগুলো জানাতে আমাদের ডাকবেন।
তিনি আরও বলেন, যদি কেউ ভালো হয় তাহলে তার সাথে কাজ করবো। আর যারা খারাপ আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, খুব শীঘ্রই আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদেরকে ফোন করবো, প্রয়োজনে বাড়িতে যাব। ভালো হলে আলহামদুল্লিাহ। না হলে প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে তাদের জন্য প্রতিবাদ করবো। আমরা হাতে হাত রেখে পঞ্চগড়ের উন্নয়নের জন্য এক সাথে কাজ করবো। আমরা চাই সবাই এক সাথে কাজ করি। এছাড়াও ঐক্যমত হয়ে পঞ্চগড়ের উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনি।
তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলার ২০টি মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ ২০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মর্মে তালিকা প্রকাশ করেন। এ অর্থ দুইভাবে উত্তোলন হবে বলে জানান সারজিস।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুল মতিন, সাজিদুল ইসলাম সাজিদসহ এনসিপির নেতাকর্মী, মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতারা।
নির্বাচন কমিশন চাপের কাছে নত: সারজিস আলম