রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হয়েছে নির্মাণ, আবাসন, পানি, বিদ্যুৎ ও সংশ্লিষ্ট শিল্প নিয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। আয়েজিত প্রদর্শনীগুলো হলো ৩০তম বিল্ড সিরিজ অব এক্সিবিশন্স, ২৭তম পাওয়ার সিরিজ অব এক্সিবিশন্স এবং সপ্তম ওয়াটার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ২০২৫।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ)-এর আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত, প্রতিদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ অ্যান্ড এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেরুন এন. ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার (মহাপরিচালক, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট), এম.এ. কামাল বিল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়), মো. মুস্তাফিজুর রহমান (উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা ওয়াসা) এবং মো. তানভীর মাসুদ (প্রকল্প প্রধান, জিআইজেড বাংলাদেশ)।
তিন দশক পূর্তি উদযাপন করছে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ও বৃহত্তম নির্মাণ প্রদর্শনী ‘বিল্ড সিরিজ অব এক্সিবিশন্স’। এ বছরের আয়োজনে রয়েছে ‘৩০তম বিল্ড বাংলাদেশ ২০২৫’ এবং ‘২৪তম রিয়েল এস্টেট এক্সপো ২০২৫’। এখানে আধুনিক নির্মাণ সামগ্রী, টেকসই আবাসন সমাধান, ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও স্মার্ট বিল্ডিং প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে দেশি–বিদেশি কোম্পানিগুলো।
আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণ খাত বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপিতে ৮ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। দ্রুত নগরায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে এই খাতের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।
একই আয়োজনে বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য শক্তি খাতকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘২৭তম পাওয়ার বাংলাদেশ ২০২৫’, ‘২২তম সোলার বাংলাদেশ ২০২৫’ এবং ‘৭ম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল লাইটিং এক্সপো ২০২৫’। এ প্রদর্শনীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সোলার প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী আলোক সমাধান প্রদর্শিত হচ্ছে, যা টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘৭ম ওয়াটার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৫’-এ পানি ও বর্জ্যপানি ব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধকরণ, লবণাক্ততা দূরীকরণ এবং স্মার্ট পানি প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সমাধান তুলে ধরা হচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রেক্ষাপটে এই প্রদর্শনী দেশের পানি ব্যবস্থাপনা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রদর্শনীতে চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যসহ ২০টিরও বেশি দেশের ২০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ৫০০টিরও বেশি বুথ ও আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে ওয়ালটন, এসিআই, রহিম আফরোজ, ওমেরা ও এসএসজি-সহ বাংলাদেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো তাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন তুলে ধরছে। তিন দিনে প্রায় ৩৫ হাজার ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী দর্শনার্থীর অংশগ্রহণের আশা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
প্রদর্শনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাঁচটি আন্তর্জাতিক সেমিনার, যেখানে নির্মাণ, আবাসন, জ্বালানি ও পানি খাতের বৈশ্বিক প্রবণতা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নিয়ে বক্তব্য রাখছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
১৫ নভেম্বর, শনিবার, জিআইজেড বাংলাদেশ ও সেমস-গ্লোবালের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন “Innovations & Partnerships for Sustainable Energy Transition”। এখানে গ্রিন কুলিং, নবায়নযোগ্য শক্তি, গ্রিন স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ও কর্পোরেট পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টস নিয়ে চারটি পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
‘আর্কিটেকচার অব রেজিলিয়েন্স’ প্রদর্শনী এবারের আয়োজনের বিশেষ আকর্ষণ। ২০০০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পুরস্কারপ্রাপ্ত স্থাপত্য ডিজাইনগুলো ডিজিটালি প্রদর্শিত হচ্ছে আইসিসিবির ৪ নম্বর হলে। এটি বাংলাদেশের সমকালীন স্থাপত্যে উদ্ভাবন ও টেকসই নকশার গুরুত্বকে প্রতিফলিত করছে।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত সেমস-গ্লোবাল গত তিন দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজন করেছে ৭৬২টিরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এসব আয়োজনে অংশ নিয়েছে ৫৫ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ২০ লাখ ব্যবসায়িক দর্শনার্থী।
প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয় প্রদর্শনীর মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল সিরিজ, পাওয়ার সিরিজ, বিল্ড সিরিজ, ফুড অ্যান্ড এগ্রো এক্সপো, মেডিটেক্স ও অটো সিরিজ।
বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নগরায়নের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ, জ্বালানি ও পানি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবনী সমাধান বিনিময়ের এ আয়োজন দেশের টেকসই উন্নয়নযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।