যমুনা ঘেরাও কর্মসূচির মিছিলে পুলিশের বাধা

বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে দেশের বন্দর নিয়ে করা রাষ্ট্রীয় চুক্তির প্রতিবাদে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে যমুনা অভিমুখে রওনা দেওয়া বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১ টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারী বামজোটের নেতাকর্মীদের কয়েক দফা ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ  কয়েকজনকে লাঠিচার্জ করে। পরে বিক্ষোভকারীরা কাকরাইল মোড়েই বসে পড়লে সড়কের দুইপাশেই যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী, তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যমুনা ভবন ঘেরাও করতে প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে রওনা দিয়ে কাকরাইল পৌঁছলে তারা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন।

বিক্ষোভকারীরা এ সময় ‘আমার দেশের মোহনা, বিদেশিদের দিব না’, ‘বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার, বিদেশিদের হবে না’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সেখানেই বাম জোটের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। তারা বলেন, বিদেশি কোম্পানির কাছে চট্টগ্রামসহ দেশের বন্দরগুলো সরকার ইজারা দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হলো।

এর প্রতিবাদে তাদের এই কর্মসূচীতে পুলিশ হামলা করেছে অভিযোগ করে তারা কোনভাবেই দেশের বন্দর বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার হুশিয়ারি দেন। অন্যথায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচী ঘোষণা করার কথাও বলেন তারা।

সেখানেই তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষ করে বেলা সোয়া একটার দিকে সড়ক ছেড়ে দিয়ে মিছিল নিয়ে চলে যান। এরপর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকের কর্মসূচীতে পুলিশের হামলায় কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ অনেকে আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’

তাদের এই কর্মসূচীতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিলসহ দাবি না মানলে আগামীতে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচী দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

কর্মসূচির ঘটনাস্থল উপস্থিত রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম  বলেন, ‘তারা কর্মসূচী করতে চেয়েছে, কাকরাইলে তারা অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়ে চলে গেছে। আধা ঘন্টার মতো রাস্তায় যান চলাচল বিঘ্ন ঘটে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’

এখানে উল্লেখ্য যে, গত ২৩ নভেম্বর বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দেশের বন্দরগুলো নিয়ে করা চুক্তি বাতিল করতে সরকারকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ ঘোষণা দেন যে, দাবি না মানলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করা হবে।
 
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনিশ কোম্পানি এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে ১৭ নভেম্বর চুক্তি করে সরকার। একই দিন পানগাঁওয়ের নৌ টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে চুক্তি হয় সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি মেডলগের সঙ্গে।

গত ২৫ মে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিন দেশের তিন কোম্পানির সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলার বিষয়টি সামনে আনেন।

এরপর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবিসহ বিভিন্ন বাম দল ও সংগঠন, বিএনপি, শ্রমিক সংগঠন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতায় নামে।

বিদেশিদের হাতে বন্দর ছেড়ে দিলে দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে কয়েকটি রাজনৈতিক দলগুলো ও অর্থনীতির বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে মত দিচ্ছেন।