চট্টগ্রামে হঠাৎ করে অস্বাভবিক ভাবে বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। রমাজানের শেষ দিকে ঈদের আগ মূহূর্তে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়াতে মুরগি কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমাজান মাস জুড়ে ১৭০ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি হওয়া মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। এখানেই থামবে নাকি আরো ছাড়িয়ে যাবে তা অনিশ্চিত।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার একটি মুরগির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রেতা আব্দুল জব্বার। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে। পবিত্র শবে কদর ও ঈদ ঘিরেই দাম বাড়িয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
রোজার আগে নিম্নমুখী মুরগির বাজারে হঠাৎ কেন এমন অস্থির পরিস্থিতি? এমন প্রশ্নে নিরুত্তর বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা বলছেন, সুযোগ বুঝেই ওরা ক্রেতাদের পকেট হাতিয়ে নেওয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। যখন যেমন ইচ্ছে তেমন দাম, লাগাম টানার কেউ নেই। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর দাবি, বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, দামের বাড়াবাড়িতে আমাদের কিছুই করার নেই। বাড়তি চাহিদা থাকায় সাপ্লায়াররা বাড়তি দাম নিচ্ছেন, আমরা সে হিসেবে কেজি প্রতি বিক্রি করছি। চাহিদা বাড়লেই সাপ্লায়াররা দাম বাড়ায়, আমাদেরও বাড়াতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, একদিকে বাচ্চার বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্যদিকে মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম অনেক। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচের প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর এসবে ভুগছেন ক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই কেজির বেশি ওজনের ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকায়, দেড় কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০৫ থেকে ২১০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার ও সোনালি জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩১০ থেকে ৩৩০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদকে সামনে রেখে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কাজীর দেউড়ি বাজারের মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ সাত্তার। তিনি বলেন, ঈদ ঘিরে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাবে। তাই অর্ডার নিতে চাইলেও সাপ্লায়াররা চাহিদা মোতাবেক দিতে পারবে না বলছে। যার কারণে দাম বাড়তি থাকার আশংকা আছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ার শংকায় ক্রেতারা ইচ্ছেমতো মুরগিসহ অন্যান্য সদাই কিনে নিচ্ছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) মুরগির বাজারে ভিড় দেখা যায়। ঈদের আগেই ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মুরগি কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। রমজানজুড়ে গরিব-মধ্যবিত্তদের আমিষের অবলম্বন ছিল মুরগির মাংস। তবে শবেকদরের পরই ঈদকে ঘিরে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় তা এখন অনেক পরিবারের জন্য ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ক্রেতারা বলছেন, রোজা ঘিরেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এখন নতুন করে ঈদকে ঘিরে আবারো বাজারে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। বলতে গেলে যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে যাই ধরি, সেটারই দাম বেশি। কয়েকদিন আগেও মুরগির মাংস ছিল ২১০ থেকে ২১৫ টাকা। আর এখন দাম বেড়ে ২৩০ তেকে ২৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত তুলে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার বাড়তি দামকেও সামনে আনছেন অনেকে।