তীব্র দাবদাহে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিশেষ করে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও হাঁসফাঁস করছেন তারা। এদিকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন।
কালাই বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের। বিশেষ করে দিনমজুর ও কর্মজীবীদের ভোগান্তি বেশি। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমের কারণে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি।
উপজেলার হাতিয়র বাজারে কথা হয় ভ্যানচালক সামছদ্দিন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে ভ্যান চালাই। এমন গরম আগে কখনো দেখি নাই। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তারপরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাড় করতে হয়। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ ভ্যান যেমন চালানো যায় না, আরেক দিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরমের কারণে দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।
পাঁচশিরা বাজার এলাকায় আরেক ভ্যানচালক স্বাধীন বলেন,গরমের দাপটে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। তীব্র রোদ আর গরম বাতাসে রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় চোখ মুখ পুড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রী না থাকায় আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে।
ভ্যানচালক ঝামুটপুর গ্রামের রাশিদুল বলেন, সকালে কিছু সময় ভ্যান চালিয়ে বিকেলের আগে আর বের হতে পারি না। এতো গরমে ঘরেও শান্তি নেই। সারাদিনে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘরে ফিরলেও লোডশেডিং। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.রেজাউল করিম দৈনিক খবর সংযোগ -কে বলেন, হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাসহ গরমজনিত রোগে প্রতিদিন আগত শত শত রোগীর চিকিৎসা দিতে যেয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরমের তীব্রতার পাশাপাশি গরমজনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে আ্মরা বার বার ভিজে কাপড়ে শরীর মোছা, বেশি বেশি পানি পান, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের স্যালাইন না খাওয়ানোসহ বেলা ১০টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
সুপেয় ও নিরাপদ পানির অভাবে এসব রোগ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমজীবী মানুষ যারা উন্মুক্ত জায়গায় কাজ করছে, তারা তো অনেক সময় নিরাপদ পানি পান না। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে অনিরাপদ পানি বা শরবত পান করছেন। এতে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।