গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: প্রায় এক যুগ ধরে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকুরি করেন আলমগীর কবির রোমান। বাড়িতে আছে টিন ও আধাপাকা বসত ঘর। কয়েক একর সম্পত্তির মালিক। চলতি মৌসুমে পেয়েছেন কয়েকশ’ মন ধান। এরপরও তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ হয়েছে দুস্থ নারীদের ভিজিডি কার্ড। এমন ঘটনা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের ভালুকাপুর গ্রামে। অভিযোগ আছে মোট কার্ডের বেশির ভাগই সচ্ছল পরিবারের নারীরা পেয়েছেন। চেয়ারম্যান মেম্বারদের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের মানুষের নামে বরাদ্দ দেয়া দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত কার্ড।
গৌরীপুর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট উপকারভোগী ৩ হাজার ২৬জন। এরমধ্যে সহনাটি ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড ৩শ ১৮জন। অভিযোগ রয়েছে, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের আত্মীয়স্বজন ও পছন্দের ব্যক্তিদের নামে কার্ড। বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দলীয় পরিচয়েও বিতরণ করা হয়েছে এসব কার্ড, যেগুলো তদারকি করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এতে প্রকৃত দুস্থ ও অসহায় নারীরা বিনা পয়সায় প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি নামের অনুসন্ধান করে সত্যতা পাওয়া যায়। ভালুকাপুর গ্রামের আলমগীর কবির ওরফে রোমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি সিলেটের একটি থানায় কর্মরত। স্ত্রী কল্পনা আক্তারও তার সাথেই থাকেন। বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অথচ তার নামে বরাদ্দ রয়েছে ভিজিডি কার্ড।
কনস্টেবল আলমগীর কবিরের ছোট ভাই জহিরুল ইসলাম রানা কার্ডের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান ভাইয়ের ইচ্ছায় একটা কার্ড আমার পরিবাররে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে কার্ডধারী কল্পনা আক্তারের স্বামী কনস্টেবল আলমগীর কবির রোমান বলেন, আমরাই দুস্থ অসহায়দের সহায়তা দেই। আমার কার্ডের কি দরকার। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে বাতিল করার ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, আমার বরাদ্ধের ১০টি কার্ডের মধ্যে এই নাম নেই। কে করেছেন তাও জানা নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন কাদের রুবেলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ছাড়া ওই এলাকার অনেক সচ্ছল ব্যক্তির স্ত্রীদের নামে কার্ড হয়েছে। তাদের মধ্যে খুররম আলীর স্ত্রী পাপিয়া সুলাতানা, আব্দুল্লাহর স্ত্রী কোহিনুর আক্তার, আজিজুলের স্ত্রী হোসনে আরা, আব্দুর রহিমের স্ত্রী মরিয়ম, নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার, ইমরান হাসানের স্ত্রী মোছাম্মৎ আশিক নুর, হাসিম উদ্দিনের স্ত্রী শামীমা আক্তার।
তাদের প্রত্যেকের রয়েছে কয়েক একর করে ফসলি জমি রয়েছে। কারও কারও আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পাকা-আধাপাকা বসত ঘর। চলতি বোরো মৌসুমে অনেকেই শতশত মন ধান পাবেন। অথচ নামের তালিকার পাশে লেখা রয়েছে সকলেই দিনমজুর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিজিডি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে অসচ্ছল মহিলাদের সচ্ছল করার লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ সেই নির্দেশনা মানেছেন না চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। সুবিধা লাভের বিনিময়ে অসচ্ছল মহিলাদের জায়গায় সচ্ছলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, ক্ষুন্ন হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার খাতুন বলেন, অনেক ইউনিয়নের এরকম অসঙ্গতির খবর এসেছে। হাতে-নাতে ধরতে পারলে কার্ড আটকে দেয়া হবে। সহনাটি ইউনিয়নে এরকম সত্যতা পাওয়া গেলে কার্ডগুলো বাতিল করা হবে।
#বিডি/