১২ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা, সীমাহীন উদ্বেগ আর এক বুক শূন্যতার অবসান। অবশেষে সব হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিট নিয়ে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন শান্তনা (৪০)।
ভারতের কানপুরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কেটেছে তার ১১ বছরেরও বেশি সময়। আজ, বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি এস এম সাখাওয়াত হোসেনের তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করে। ইমিগ্রেশনের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে তাকে তুলে দেওয়া হয় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের হাতে, যারা পরে শান্তনাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
মাকে ফিরে পাওয়ার সেই মুহূর্তটি ছিল বাঁধভাঙা আবেগের। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাস্তিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী শান্তনাকে দেখেই তার ছেলে সাগর মিয়া ছুটে যান। ১২ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মাকে খুঁজে না পাওয়ার যন্ত্রণা আজ মুহূর্তে দূর হলো। মাকে জড়িয়ে ধরে সাগর কেঁদে ফেলেন, সেই কান্না আনন্দ আর স্বস্তির। শান্তনার বোন শামসুনাহারও এই প্রত্যাবর্তনে মহা খুশি।
ওসি এস এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২০১৪ সালের দিকে নিখোঁজ হয়েছিলেন শান্তনা। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় সম্ভবত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যান। প্রায় এক যুগ পর মাকে ফিরে পেয়ে পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত।
এই প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে এক মানবিক উদ্যোগ। গত বছর (২০২৪) ১৭ জুলাই শান্তনার খোঁজ পান পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘ঈশ্বর সংকল্প’ এর সমন্বয়ক তপন প্রধান। তিনি যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের সংবাদকর্মী ও ফটো সাংবাদিক শামসুল হুদার সাথে। হুদা নিজ উদ্যোগে দীর্ঘ দিন ধরে সীমান্ত পেরিয়ে নিখোঁজ মানুষদের খুঁজে বের করার কাজটি করে আসছেন। এই দুই মানবদরদী মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তনা তার স্বামী, চারটি সন্তান ও স্বজনদের কাছে ফিরে আসার সুযোগ পেলেন। ২০০০ সালে বিয়ে হওয়া এবং স্থানীয় আদালতের মুহুরি স্বামীর এই পরিবারের জন্য এটি ছিল এক নতুন জন্ম।
দীর্ঘ ১২ বছরের অপেক্ষার পর, ভালোবাসার টানে শান্তনা ফিরে পেলেন তার ঘর আর স্বজনরা পেলেন তাদের হারানো মানুষটিকে।