পিরোজপুরে জমে উঠেছে ভাসমান নৌকার হাট, প্রায় ২০ কোটি টাকার বিক্রি 

পিরোজপুরে জমে উঠেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান নৌকার হাট। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার ভাসমান এই নৌকার হাটের দেখা মেলে। তবে সপ্তাহের শুক্রবারে পুরোপুরি জমে ওঠে আটঘর কুড়িয়ানার এই ভাসমান নৌকার হাট। এদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে পর্যটকরা ভিড় জমান। পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও আগমন ঘটে এই ভাসমান নৌকার হাটে। 

অবশ্য হাট জমে উঠলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বৃষ্টি হলে দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই, বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা রোদের তীব্র তাপে পুড়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে হয় নৌকা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের।

বর্ষা মৌসুম এলে চোখ জুড়ানো নৌকার ভাসমান হাটের দেখা মিলবে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায়। শতশত নৌকা পড়সা সাজিয়ে বসে আছে বিক্রেতারা। বছরে একবার ব্যবহার উপযোগী এই নৌকা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গার মানুষজন।

ঘাস কাটা, মাছ ধরা, পেয়ারা ও আমড়া পাড়ার প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী এই নৌকা কিনতে আসছেন বরিশাল, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি, নলছিটি, বানরীপাড়া নাজিরপুর, গোপালগঞ্জ, বৈঠাকাটা, কাঠালিয়া, রাজাপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র- এই ৩ মাস জমে ওঠে ভাসমান এই নৌকার হাট।

বর্ষা মৌসুমে যেন একটু বেশি জমজমাট হতে দেখা যায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ভাসমান হাট। এই হাটে বিক্রেতারা যেমন খুশি নৌকা বিক্রি করে, তেমনি খুশি ক্রেতারা নৌকা কিনে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কেনাবেচার এক ধুম লেগে যায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।

নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুরিয়ানায় ভাসমান নৌকার হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে শাপলা ফুলের মত ফুটে আছে সারি সারি নৌকা। আটঘর খাল থেকে ট্রলার কিংবা ইঞ্জিল চালিত কোন নৌকা ভাসমান হাটের গা ঘেঁষে যাওয়ার পরে সূর্যমুখী ফুলের মত দুলতে থাকে নৌকাগুলো। 

এ দৃশ্য দেখলে যে কারো চোখের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য এদিক-ওদিক করার মত নয়। এমন দৃশ্য দেখতে প্রতি হাটে ভিড় জমান ভ্রমনপিপাসু মানুষ।

তবে এত সৌন্দর্যের ভিড়েও ভোগান্তির শেষ নেই ভাসমান নৌকার হাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের। ক্রেতা মাছুম মল্লিক জানান, কয়েকটা নৌকা দেখেছি, দামদর হচ্ছে না। নৌকা প্রয়োজন। তাই একটা নিয়ে যাবো কিনে।

বৈঠা কিনতে আসা রুবেল শেখ বলেন, নেছারাবাদের কাঠের সুনাম দেশব্যাপী এখান থেকে নৌকা বা বৈঠা কিনলে বেশি দিন বয়স পায়। তবে তুলনামূলকভাবে দাম বেশি। 

বিক্রেতা কবীর হাওলাদার বলেন, ২৫টি নৌকা নিয়ে আসছি, এন পর্যন্ত ১০টি নৌকা বিক্রি করেছি। ৪/৫ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করেছি। এ নৌকা স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকে।

দর্শনার্থী জমির উদ্দিন জানান, নেছারাবাদ উপজেলায় শত বছরের পুরনো একটি ভাসমান নৌকার হাট রয়েছে। এখানে রয়েছে ভাসমান পেয়ারা বাজার যেটা দেখতে এসে আমার খুব ভালো লাগলো। দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে এ হাট দেখতে।

অনুপ সিকদার নামের এক বিক্রেতা বলেন, এখানে নৌকা কিনতে বরিশাল বিভাগের লোক বেশি আসে। প্রতি হাটে ৩/৪ শত পিচ নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে। আমাদের তৈরি নৌকাগুলো মান খুব ভালো। 
 
স্থানীয়রা মনে করেন, ভাসমান এই হাটে প্রতি মৌসুমে ১৫-২০ কোটি টাকার নৌকা কেনাবেচা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে উদ্যোগ নিলে নেছারাবাদের ভাসমান এই নৌকার হাটটি বৃহৎ পর্যটককেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। হতে পারে আটঘর কুরিয়ানা এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে এটি আরো সমৃদ্ধি করা হবে। এখানে পেয়ারা, আমড়া, নৌকার ভাসমান হাট দেখতে দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থান ও বিদেশিরা আসে। সেই দিক বিবেচনা করে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি রাস্তা, ঘাট, বসার স্থান সৃষ্টি করার।