পিরোজপুরের নাজিরপুরে পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে জড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছেন হরিদাসী হালদার (৬০) নামের এক বৃদ্ধা।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ৬নং নাজিরপুর সদর ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের রাস্তার পাশে থাকা সুপারি বাগানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নাজিরপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত হরিদাসী হালদার নাজিরপুর উপজেলার ৬নং নাজিরপুর ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের সুখরঞ্জন হালদারের স্ত্রী।
মৃত হরিদাসী হালদারের ছেলে রিপন হালদার জানান, বিকেলে বাড়ির পাশে খালে গোসল করার জন্য তাদের সুপারি বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তায় উঠার সময় সেই ছেঁড়া তারে মায়ের কানের পাশে জড়িয়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
তিনি অভিযোগ করেন, ৭-৮দিন আগেই পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং আমারা এ বিষয়টি অভিযোগ নাম্বারে কয়েকবার জানানোর পরেও তারা না আসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, অভিযোগ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ইলেক্টিশিয়ান লিটন গাফিলতি করে এ তার ঠিক করার উদ্যোগ নেননি।
স্থানীয়রা জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্থানীয় তাপসের মাধ্যমে অফিসে জানালেও কোনো সুরাহ পাইনি। হরিদাসীর মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে সংযোগ দিয়ে সটকে পড়েন অফিসের লোকজন। স্থানীয়দের অভিযোগ, টাকা না দিলে অফিসের লোকজন কাজ করে না।
হরিদাসী হালদারকে বাঁচাতে তার নাতি অনিক হালদার এগিয়ে এলে সে আহত হয়। পরে এলাকাবাসী হরিদাসী হালদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাজিরপুর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নাজিরপুর পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মচারী বলেন, এই মৃত্যুর দ্বায়ভার আমাদের অফিসের, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে অফিস মৃত্যুর পরিবারের সঙ্গে একটা সমঝোতা করবে আমার ধারণা।
এদিকে নাজিরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কামরুজ্জামান, বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন। আমাদের কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।
অপরদিকে নাজিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাসেল সিকদার বলেন, গতকাল রাতে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন তাদের ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূণর দেওয়ার জন্য জোড় করছে। অবহেলায় একটা মৃত্যুর মূল্য ১০ হাজার টাকা! এভাবে যদি পার পেয়ে যায়, তাহলে এই হরিদাসীর মতো আরো মানুষের জীবন দিতে হবে। আমি চাই, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ অবহেলায় মারা না যায়।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, নাজিরপুর পল্লী বিদ্যুতের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ভবিষৎতে এমনটি হবে না এবং সব সময় সতর্ক থাকবে।