পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন ধূলাসার ইউনিয়নের চর গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখলে নিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। নির্বিচারে গাছ কেটে কৃষিজমি ও বসতবাড়ি গড়ে তোলায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে এ বনাঞ্চল, যা উপকূলীয় এলাকার জন্য ছিল পরিবেশের অন্যতম রক্ষাকবচ। সেই বনে নির্বিচারে গাছ কেটে চলছে দখল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গঙ্গামতির বনে কেওড়া, ঝাউ, আকাশমনি ও রেন্ট্রি গাছ কেটে জমি সমতল করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এমনকি স্থানীয় জেলেরা গাছ কেটে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলাল শরীফ, ইয়ামিন শরীফ, আল-আমিন শরীফ ও মন্নান শরীফের নেতৃত্বে এই দখল বাণিজ্য চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই এসব কাজ করা হচ্ছে। বন বিভাগ থেকে মাঝে মাঝে মামলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কোনো প্রভাবশালী দখলদারকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় অভিযোগ করেন, “টাকা দিলেই বন কর্মকর্তারা চোখ বুজে থাকে। আমরা জানালেও তারা আসে না।”
চর গঙ্গামতি বিট কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। তবে কাউকে হাতেনাতে ধরা যায়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে.এম. মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমরা জানি। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে উপকূলীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুর রহমান মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের (উপরা) সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, “গঙ্গামতির বন শুধু প্রকৃতি নয়, উপকূলের লাখো মানুষের জীবনরক্ষাকারী ঢাল। এটি বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার একমাত্র ভরসা। যারা এই বন ধ্বংস করছে, তারা দেশ ও জাতির শত্রু।” তিনি বন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অভিযুক্ত আল-আমিন শরীফ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের সেখানে কোনো জমি নেই। কে গাছ কাটছে, আমরা জানি না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, বন বিভাগের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই গঙ্গামতির সংরক্ষিত বন পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। আর এর পরিণতি ভয়াবহভাবে আঘাত করবে উপকূলীয় পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও মানুষের জীবনযাত্রায়।