চারদিকে ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খধ্বনি আর পূজামণ্ডপ সাজানোর ব্যস্ততায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া এখন শারদীয় দুর্গোৎসবের রঙে রঙিন। উপজেলার ৪৯টি পূজামণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মণ্ডপের ভেতরে বাইরে সাজসজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে। বাঁশ, কাপড়, আলোকসজ্জা আর রঙিন কাগজে মণ্ডপগুলো নতুন রূপ পাচ্ছে। প্রতিমা তৈরির কারিগররা এখন সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৃৎশিল্পীদের চোখে-মুখে ক্লান্তি থাকলেও আনন্দ লুকোনো যায় না। কারও হাতে তুলির আঁচড়, কারও হাতে সোনালি রঙে শোভা পাচ্ছে দেবী দুর্গার অলংকার।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় মদনমোহন জিউর মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তে রঙের কাজ চলছে। কেউ দেবী দুর্গার হাতের অলংকারে সোনালি রঙ তুলছেন, কেউ আবার মহিষাসুরের শরীরে শেষ আঁচড় দিচ্ছেন। মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতেই ভেসে আসে রঙের গন্ধ, আর মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ত পদচারণা।
এই মণ্ডপে মৃৎশিল্পী সমির পাল জানান, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজন নিয়ে দিন-রাত প্রতিমায় রঙের কাজ করছি। তবুও কষ্ট মনে হচ্ছে না। কারণ এই প্রতিমাগুলোতেই সবার আনন্দ। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট করার লক্ষ্য নিয়ে নিপুণভাবে কাজ করছি, যাতে অন্য মন্দিরের চেয়ে এ মন্দিরের প্রতিমা সেরা হয়।
শুধু প্রতিমাই নয়, উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরাও। নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ, দর্শনার্থীদের সুবিধাসহ সব দিকেই তাদের নজর।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কিরন চন্দ্র বসু জানান, এবারের পূজায় আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিটি মণ্ডপে আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেমের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
পূজা ঘিরে স্থানীয় বাজারগুলোতেও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কাপড়, গয়না, প্রসাধনীসহ সব দোকানেই ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত নতুন পোশাক কেনায়, আর ছোটরা উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে।
কাপড় বিক্রেতা সজিব মণ্ডল জানান, পূজার আগে ক্রেতাদের ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শাড়ি আর সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। আমরা রাত অবধি দোকান খোলা রাখছি।
একইভাবে কসমেটিকস ব্যাবসায়ী আরমান বলেন, লিপস্টিক, চুড়ি, টিপ এসব জিনিসের বিক্রি এখন অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েরা পূজার সাজগোজের জন্য আগেভাগেই কিনে নিচ্ছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার জানান, প্রতিটি মণ্ডপে যাতে সুষ্ঠুভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য আমরা ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।
ভান্ডারিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশও দায়িত্বে থাকবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মণ্ডপে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।