নদীতে ফ্রি স্টাইলে বালু উত্তোলন, ভাঙছে বেড়িবাঁধ-বসতি-কৃষিজমি

সরকারের নির্দিষ্ট বালুমহাল ‘খাজুরা’ থাকলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাবনাবাদ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ফ্রি-স্টাইলে দিনে-রাতে বালু কাটা হচ্ছে। অবৈধভাবে এই ভাঙনপ্রবণ নদী থেকে বছরের পর বছর ধরে কয়েকটি প্রভাবশালী মহল বালু কেটে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব।

অপরদিকে রাবনাবাদ পাড়ের দীর্ঘ জনপদ, বাড়িঘর, ফসলি জমি, মসজিদসহ গোটা এলাকার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে ভাঙনের এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রবল ভাঙনের পাশাপাশি নদী হারাচ্ছে তার গতিপথ।

ইলিশের বিশাল আহরণ ক্ষেত্র রাবনাবাদ নদী ইলিশ শূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা হয়েছে। সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ৮ বছর ধরে এই নদীতে বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীর সহচররা শতশত কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে অবৈধ পন্থায় বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলেন। সরকার পতন হলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের গাফিলতি কিংবা সংশ্লিষ্টতার কারণে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কখনো থামেনি। 

অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি প্রভাবশালী মহল এখনো অবৈধভাবে রাবনাবাদ নদী থেকে বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে রাবনাবাদ পাড়ের অন্তত ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের অর্ধেকটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বিশেষ করে দেবপুর থেকে করমজাতলা পর্যন্ত গোটা এলাকার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক দফা জরুরি প্রটেকশনের নামে কয়েক কোটি টাকার জিওব্যাগ ও জিও টিউব দিলেও তা কয়েক মাসের মধ্যেই আবার নদীতে ভেসে গেছে। এতে অন্তত ৪০০ পরিবার বাড়িঘর জমিজমা হারিয়েছে। এখন আর বিকল্প বেড়িবাঁধ করার মতোও কোন সুযোগ নাই।

করমজাতলা নদীপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানি মো. রেজাউল দৈনিক খবর সংযোগকে জানান, ৩/৪ মাস আগে রাবনাবাদ নদীর জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধের ভাঙন রক্ষায় দেওয়া জিও টিউব ও জিওব্যাগসহ প্রায় ৪০০ ফুট বাঁধের টপসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় সব শেষ, এখন বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকছে। জরুরি মেরামতের ৮/৯ মাসেই তারা আবার বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

বাঁধের পাশের বাসিন্দারা জানান, বছরের পর বছর রাবনাবাদ নদী থেকে অসংখ্য ড্রেজারের বালু কাটায় এখানটায় ভাঙনের ঝুঁকি আরো বেড়েছে। প্রবল ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেলেও বালু কাটা বন্ধ হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলার ৫৪/এ পোল্ডারের গোটা বেড়িবাঁধটিই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে প্রতিবছর বিলীন হচ্ছে।


রাবনাবাদ নদী থেকে কেটে আনা বালু আনলোড করার সময় এমভি হয়রত আলী জাহাজের স্টাফ মো. আউয়াল জানান, তারা ধানখালী সংলগ্ন রাবনাবাদ নদী থেকে এক ট্রিপে ৩ হাজার সিএফটি বালু কেটে এনেছেন। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তারা বালু আনার কাজ করছেন বলে জানান। এই বালু তারা পায়রা বন্দরের একটি সড়ক উন্নয়ন কাজে দিচ্ছেন।

এভাবে নির্দিষ্ট বালুমহাল ‘খাজুরা’ রেখে যে যার মতো অতি ভাঙনপ্রবণ নদী ও ইলিশের আহরণ ক্ষেত্র দীর্ঘ রাবনাবাদ চ্যানেলের বিভিন্ন স্থান থেকে ফ্রি-স্টাইলে ড্রেজার লাগিয়ে উত্তোলনে জনপদ ও কৃষিজমিসহ মানুষের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াসীন সাদীক দৈনিক খবর সংযোগকে জানান, সরকারের নির্দিষ্ট বালুমহাল আন্ধারমানিক নদীর সাগর মোহনায় ‘খাজুরা’ বালুমহাল রয়েছে, যা ইজারা দেওয়া হয়। যেখান থেকে ফি বছর সরকার কমপক্ষে ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। ওই বৈধ বালুমহালটি প্রায় ২৫৩ একর এরিয়াজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। এ বছর বালুমহালটি খাস আদায়ের আওতায় রয়েছে। একমাত্র বৈধ বালুমহাল ছাড়া আর কোন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহআলম দৈনিক খবর সংযোগকে জানান, সরকারের নির্দিষ্ট বালুমহাল ছাড়া আর কোন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। রাবনাবাদ নদী থেকে বালু উত্তোলনে নদীর ভাঙন বেড়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।