কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ওঠা নিয়ে জটিলতার জেরে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা তাসনিমকে প্রকাশ্যে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ দাবি করে ইব্রাহীম নামের এক পর্যটক ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও সূত্রে জানা যায়, সকালে ঘাটে জাহাজের সময়সূচি নিয়ে একদল পর্যটক জাহাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা তাসনিম। তিনি হট্টগোলের কারণ জানতে এগিয়ে গেলে ইব্রাহীম নামের ওই পর্যটক নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুলিশকে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও তানজিলা তাসনিম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে ২ হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। আমরা সেই নিয়ম তদারকি করছিলাম। কিছু পর্যটক অভিযোগ করেন তাদের জাহাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে গেছে। আমি বিষয়টি বুঝতে গেলে হঠাৎ ইব্রাহীম নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দাবি করেন এবং পুলিশকে আমাকে গ্রেপ্তার করতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের ভিডিও সংরক্ষিত আছে। তিনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও তিনি এভাবে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার রাখেন না।
অভিযুক্ত ইব্রাহীম পরে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি স্যারকে (ইউএনও) চিনতে পারিনি, সেজন্য দুঃখিত। আমি ও আমার সহকর্মীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। আমাদের টিকিটে জাহাজ ছাড়ার সময় সকাল ৭টা লেখা ছিল, কিন্তু ঘাটে এসে শুনি ৬টায় জাহাজ ছেড়ে গেছে। এতে বিভ্রান্ত হয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলি।
সি-ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, নদীর নাব্যতা ও জোয়ার-ভাটার কারণে জাহাজের সময়সূচি ও ঘাট মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করতে হয়। ‘বে-ক্রুজ’ জাহাজটি নাব্যতা সংকটের কারণে ঘাট পরিবর্তন করেছিল, কিন্তু পর্যটকরা ভেবেছিলেন সেটি ছেড়ে গেছে। পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলে ওই ১২ জন পর্যটককে ‘কেয়ারি সিন্দাবাদ’ জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ১২টি নির্দেশনা মেনে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকরা দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।