দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ও বিখ্যাত পর্যটন স্পট টেকনাফের দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে কেবল একটি। জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক-সংকটে ধুঁকছে একযুগের বেশি সময় ধরে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬টি। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৪টি পদ প্রায় ১৪ বছর ধরে শূন্য।বর্তমানে মোহাম্মদ তাহের ও মুহাম্মদ নুরুল হুদা নামের দুজন শিক্ষকপাঠদান করছেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় মোহাম্মদ তাহের সেই দায়িত্ব পালন করেন।তাকে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। শিক্ষক নুরুল হুদাকে দিয়েই মূলত চলে পাঠদান।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে দিনদিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাঁচ-ছয় বছর আগেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ৫ শতাধিক। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৮ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১৮ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৮ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৮০ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, ১৯৪৮ সালে ৩৭ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি ছাড়া সেন্টমার্টিনে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তবে কয়েকটি নুরানি মাদরাসা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দুজন শিক্ষক দিয়ে এত শিক্ষার্থীকে পড়ানো সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের কোনো কাজে আমি বাইরে থাকলে একজন শিক্ষকই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ঠিকমতো পাঠদান সম্ভব হয় না। এতে অভিভাবকেরা ও বিদ্যালয়টিতে শিশুদের পাঠাতে চান না। ফলে অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, দ্বীপে যেসব বাসিন্দার সামর্থ্য রয়েছে, তারা কক্সবাজার বা টেকনাফ সদরে রেখে সন্তানদের পড়ান। কিন্তু দরিদ্র বাসিন্দাদের পক্ষে সেটি সম্ভব হয় না। দ্বীপের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টির শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দিলে এই সংকট কাটানো যাবে।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও কিছুদিন পর বদলি হয়ে যান, তাই সংকট কাটছে না। শিক্ষক পদায়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আরজু বলেন, সেন্টমার্টিনে যেতে সাগরপথ পাড়ি দিতে হয়। তাই নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা সেন্টমার্টিনে যেতে চান না। বিদ্যালয়ের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।