বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ের আঘাতে খেজুর গাছিয়া বেড়িবাঁধ ২৫০ মিটার ভেঙে গেছে। ফলে সেখানকার প্রায় ২ হাজার পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
সম্প্রতি ঢেউয়ের আঘাতে উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন খেজুর গাছিয়া বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ২ দফায় এই ভাঙন দেখা দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধ ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় বাঁধ নির্মাণ শ্রমিকদের বসে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙন স্থানটি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রথম দফায় গত ২ জুন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধটি ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য জরুরি উদ্যোগ নিলেও দেড় মাস অতিবাহিত হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলে তা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় গত শনিবার সকাল থেকে বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়। ওইদিন দুপুরের মধ্যে জোয়ারের পানির চাপে বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা পুরোপুরি ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বেড়িবাঁধের ভেতরের বাসিন্দা নুরে আলম মাঝি বলেন, গত শুক্রবার সকালে খেজুর গাছিয়া বেড়িবাঁধটি জোয়ারের পানির ঢেউয়ের আঘাতে দ্বিতীয় দফায় ভাঙ্গান শুরু হলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় দুই হাজার পরিবার ঘরবাড়ি রয়েছে। পানি ঢুকে পড়লে তাদের অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়বে।
স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী বসিরউল্লাহ ও বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, গত ২ জুন প্রথন দফায় বেড়িবাঁধ ভাঙ্গান দেখা দিলে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি নির্মাণের জন্য ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ঠিকাদার কিছুদিন পর মাটি ও জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালায়। দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার সকালে থেকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ও উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধটির ৯০ শতাংশ বিলীন হয়ে যায়।
ওইদিন রাতে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে জিও ব্যাগের কাপড় দিয়ে বাঁধ ভাঙ্গান রোদের চেষ্টা চালনো হয়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে বেড়িবাঁধের বাকি ১০ শতাংশ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে স্থানীয় বাসিন্দাদের। খুব দ্রুত উপজেলা প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম দিপু ফরাজি ও যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজটি হাতে নেওয়ার পর থেকে কাজ চলমান রয়েছে। হটাৎ নিম্নচাপের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ভেঙে যায়। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে জিও ব্যাগের কাপড় দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানো হয়। শনিবার দুপুর থেকে নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে বাঁধ শ্রমিকরা।
চরফ্যাশন উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, গত ২ জুন খেজুর গাছিয়া বেড়িবাঁধটি মেঘনা নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ২৫০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৪৫ লাখ টাকার বরাদ্দ করা হয়।
এর মধ্যে ডিপিএন টেন্ডারের মাধ্যমে উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম দিপু ফরাজি ও উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেলকে বাঁধ নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ২ মাস সময়ের মধ্যে তারা বাঁধ নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে তারা মাটি ভরাটের কাজ করলেও তা জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে মাটি মিশে যায়।
এদিকে গত শুক্রবার জোয়ারের পানির চাপে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি দ্বিতীয় দফায় ৯০ শতাংশ ভেঙে যায়। ওইদিন রাতে উপজেলা প্রশাসনসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুই ঠিকাদারকে দেওয়া বাঁধ নির্মাণ কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।