বান্দরবানের ৫৪ বেইলি সেতু অতি ঝুঁকিপূর্ণ, দ্রুত সংস্কারের দাবি

বান্দরবান জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় বেইলি সেতু রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এসব সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এসব সেতু দিয়ে চলাচল করছে।
 
৮০’র দশকে নির্মিত সেতুগুলোতে ৫ টনের বেশি যান চলাচল নিষেধ থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে অতি ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দ্রুত সংস্কার বা নতুন স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
 
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, ৭ উপজেলায় বর্তমানে ১১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানচি ও বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে রয়েছে ৬৬টি সেতু। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ৫৪টি।
 
স্থানীয়রা জানান, আশির দশকে নির্মিত পুরানো বেইলি সেতুগুলোর বেশির ভাগ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। তাই সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেতুগুলোতে ৫ টনের বেশি ভারী গাড়ী চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম মানছেন না কেউই। প্রতিদিন ২০ টনের বেশি ওজনের কাঠবোঝাই ট্রাক, বাঁশ, বালি ও ইটবাহী ট্রাক চলাচল করছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলো আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ঘটে যেতে পারে যেকোনো ধরনের বড় দুর্ঘটনা।
 
 
সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও সেতুর লোহার পাতাটন উঠে গেছে, কোথাও দেবে গেছে, আবার কোথাও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিছু সেতুর স্প্রিং পর্যন্ত খুলে পড়েছে। এভাবেই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।
 
সিএনজি চালক খোরশেদ আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর পাশে লেখা থাকে ৫ টনের বেশি গাড়ি চলাচল নিষেধ। কিন্তু প্রতিদিনই ১০-১৫ টনের গাড়ি চলাচল করছে। এত ভারী গাড়ি বেইলি সেতুগুলোতে নিরাপদ নয়।
 
পর্যটকবাহী চাঁদের গাড়ির চালক মংক্যনুং মারমা বলেন, এমনিতেই সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর গাছ, বাঁশ, বালি ও ইটবোজাই ভারী ট্রাক গেলে আরও বেশি ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যটক নিয়ে গাড়ি চালাতে আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়।
 
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওসমান বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো অনেক পুরনো। ব্রিজের ভাঙা অংশে মোটরসাইকেল বা গাড়ির চাকা পড়লে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করে জনগণের চলাচলের জন্য সুব্যবস্থা করা দাবি জানান। 
 
চাঁদের গাড়ি চালক মো. জসিম বলেন, প্রতিবার গাড়ি নিয়ে সেতু পার হওয়ার সময় বুকটা ধরফর করে। কয়েক মাস আগেও রুমা-থানচি সড়কের তিন মাইল এলাকায় সেতুর এক পাশ দেবে গিয়ে ৪ ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিল। প্রতিবছরই কোনো না কোনো ব্রিজ দেবে যায়। বৃষ্টির সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হয়ে যায়। বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে আরসিসি ব্রিজ করলে মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
 
 
বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বান্দরবান সড়ক বিভাগের অধীনে ৬৬টি বেইলি সেতু রয়েছে। বেশ কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রতিবছর সেতুগুলোকে মেরামত করি। সেতুগুলোর ক্ষেত্রে ৫ টনের অধিক ভারী গাড়ী চলাচল করার কথা না কিন্তু নানান বাস্তবতার কারণে এসব সেতুতে ভারী গাড়ি চলাচল করছে, ঝুঁকিও বেশি বেড়ে যাচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, এই বেইলি সেতুগুলোকে স্থায়ী সেতুতে রুপান্তরিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের আওতায় দুইটি সড়কে ২২টি বেইলি সেতুর পরিবর্তে আরসিসি স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ করা হবে। অবশিষ্ট সেতুগুলোর জন্য চট্টগ্রাম জোন থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
 
সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদন করলে ধাপে ধাপে সব বেইলি সেতুর পরিবর্তে স্থায়ী আরসিসি সেতু নির্মিত হলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগটা নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে এবং জনগণের দুর্ভোগ কমে আসবে। সড়কের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে।