নিমাই জুড়ী ব্রিজে উঠলেই শুরু হয় কাঁপাকাঁপি

কুমিল্লার মুরাদনগরে চাপিতলা ইউনিয়নের চাপিতলা বাজারের উত্তরপাশে নিমাই জুড়ী নদীর উপর ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন ২০ গ্রামের হাজারো মানুষ।
 
স্থানীয়রা বলেন, বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ভাঙা পিলার, সাইড রেলিং ভাঙা, ব্রিজে মাঝখানে প্লাস্টার ওঠে গর্ত রয়েছে। বর্ষাকালে নদীর পানি স্রোতে ব্রিজটি কাঁপাকাপি করে। আতঙ্কিত থাকে মানুষ। এই বোধ হয় ভেঙে পড়লো। মানুষ পার হতে গিয়ে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনায়।
 
স্কুল ছাত্রী ইভা, নুসরাত, ফেরদৌসী বলেন, বৃষ্টি হলে তো এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলা অসম্ভব। তখন প্রায় আধা ঘণ্টার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। এতে দেরি হয়, ঝামেলাও বাড়ে। 
 
চাপিতলা গ্রামের কলেজছাত্রী আখিঁ আক্তার, ছামছুন্নাহার ও ছাত্র আকাশ বলেন, নিমাই জুড়ী নদী উপর পুরাতন ব্রিজে উঠলে কাঁপাকাঁপি করে। ভয়ে নিজের শরীরও কাঁপাকাঁপি করে। অনেক সময় পা ফঁসকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
 
 
ব্যবসায়ী এমএ হাসিব বলেন, কৃষকেরা ধান-চালের বস্তা মাথায় নিয়ে আসা-যাওয়া পথে ব্রিজটি কাঁপাকাঁপি করে। অনেক সময় নিমাই জুড়ী নদীতে পড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৮৬ সালে নিমাই জুড়ী নদীর ওপর ব্রিজটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে ব্রিজটি কোন মেরামত হয়নি। আমরা বহুকাল ধরে বহুবার চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বলছি। ব্রিজটা নির্মাণ জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। চাপিতলাবাসীর একটাই দাবি, চাপিতলা বাজারে ব্রিজটা ভেঙে নতুন ব্রীজ নির্মাণ করা হোক।
 
ইউপির সাবেক সদস্য আরিফ হোসেন ও ফরিদ উদ্দিন বলেন, ১৯৮৬ সালে সাবেক টনকী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত. হানিফ সরকার সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নিমাই জুড়ী নদীর ওপর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্রিজটি এভাবে পড়ে আছে। একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী এবং ব্রিজের নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। ব্রিজর পায়া, রেলিং, পাটাতনের প্লাস্টার খসে পড়ছে।
 
 
চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম ভূঁইয়া বলেন, বহুবার উপজেলা প্রকৌশলী অফিস বরাবর অভিযোগ করেছি। কোন কাজ হয়নি। ব্রিজটির উপর দিয়ে চাপিতলা বাজারে, চাপিতলা ৩টা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, চাপিতলা কলেজ, মাদ্রাসা, চাপিতলা দরবারে, চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদ, চাপিতলা হাসপাতাল ও চাপিতলা বাস টার্মিনাল যাতায়াত করছে ২০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। যেকোন মুহুর্তে ব্রিজটি ভেঙে নদীতে পরতে পারে। তাড়াতাড়ি ব্রিজটা নির্মাণ করা জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
 
চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মুসা আল কবির বলেন, চাপিতলা ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ড, নৈইপার গ্রাম, খাপুরা গ্রাম, উলুমুড়িয়া গ্রামসহ আশপাশের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এই ব্রিজের ওপর নির্ভরশীল। ব্রিজটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় অনেককে এখন বিকল্প পথে ২ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। ব্রিজটা নির্মাণ করা অতি জরুরি। 
 
মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কাজী ফয়সাল বারী পূর্ণ বলেন, নিমাই জুড়ী নদীর ওপর ব্রিজটির আইডি নম্বর থাকলে তা যাচাই করে দ্রুত প্রকল্ল প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রয়োজনে পরিদর্শন করে নতুন ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।