জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ৬ দিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা- মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। এরপর তারা ভাঙচুর হওয়া ‘জুলাই শহীদদের’ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এলাকা এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ ঘুরে দেখেন।
পরিদর্শনকালে শহরের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে এনসিপির পূর্ব নির্ধারিত সভাস্থল পৌরপার্ক এলাকাও ঘুরে দেখেন তারা।
এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আ. হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তারা জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, কতগুলি প্রাণহানি হয়েছে। ক্ষতি হয়ত পোষানো যাবে, কিন্তু প্রাণের মূল্য পরিশোধ হবে না। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আজ গোপালগঞ্জ পাঠিয়েছেন ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য, বিশেষ করে- আপনাদের তিনি একটি মেসেজ পাঠিয়েছেন। সেটা হল, প্রধান উপদেষ্টা সবসময় গোপালগঞ্জের কেয়ার করেন এবং গোপালগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার আরো গভীরে যাবে সরকার।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনার গঠন করা হবে, যেটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত থাকবেন। সেখানে আপনারা আপনাদের কথা শেয়ার করবেন। এরপরে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সড়ক উপদেষ্টা আরো বলেন, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে কিছু একটা ঘটবে এমনটা সবাই আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছে, কিন্তু সেটা এত বড় ব্যাপকতা পাবে সেটা প্রশাসন বুঝতে পারেনি।
তারপরেও যৌথবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোকাবেলা করেছে সেটা প্রশংসনীয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সহ গণমাধ্যম কর্মীরাও আহত হয়েছে। আমরা এসেছি আজ তাদের অভিনন্দন জানাতে।
এছাড়া বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শহীদদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার এই সরকারের কাছে সবাই সমান। সামনে নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের কাজ চলমান। নির্বাচন প্রক্রিয়া যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যে নির্বাচন দিতে যাচ্ছি, সেটা হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি নির্বাচন। সেখানে সবার উপস্থিতিতে ভোট গণনা করা হবে এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
এ সময় বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলার তানিয়া জামান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসানসহ দুই মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও অনেক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তারা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত অফিসারদের সাথে কথা বলেন। পরে এনসিপির সভামঞ্চ, সংঘর্ষের স্থান, জুলাই স্মৃতি স্তম্ভসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন।