নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক সমিতি শতাধিক গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তর বরাবর প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ওই সব অভিযোগ সূত্র ও প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি এনজিও রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় ২০২০ সালে গড়ে ওঠে।
সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন- মাইনুদ্দিন খান জয়, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন মো. সবুজ ও কোষাধক্ষ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ জিকু।
এর মধ্যে মোহাম্মদ জিকু চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের সোলেমান মিয়ার ছেলে। ওই সমিতিতে চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকাসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত হন। প্রথম অবস্থায় এলাকার কিছু গ্রাহককে ঋণ দিয়ে লোভ দেখান।
পরে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকরা এফডিআর, সঞ্চয় ও বিভিন্নভাবে সমিতিতে টাকা গচ্ছিত রাখতে শুরু করেন।
এলাকার পরিচিত হিসেবে মো. জিকু এসব টাকার দায়িত্ব নেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। বেশ কিছুদিন আগে নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি অফিস তালা বন্ধ করে প্রতারক মো. জিকু, মাইনুদ্দিন খান জয় ও মো. সবুজসহ অন্যান্য কর্মচারী কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। সমিতির অফিস তালা বন্ধ দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পালিয়ে যাওয়া প্রতারকদের সন্ধান পাননি।
চানপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শাহিন জানান, দৈনিক সঞ্চয় হিসেবে এক লক্ষ ২৪ হাজার, এফ ডি আর বই এককালীন ৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর নিকট থেকে সঞ্চয় বই হিসেবে ৭৩ হাজার টাকা, মায়ের কাছ থেকে এফডিআর বই এককালীন ৫০ হাজার টাকা সর্বমোট ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এই সমিতিতে জমা করেন।
প্রতারক শিকুর বাবা-ভাইসহ পরিবারের লোকজন এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইতে গেলে অপহরণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। তারা শেষ সম্বল সমিতিতে জমা করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। জমা করার টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগী মো. শাহিন।
একই এলাকার আলামিন মিয়ার স্ত্রী সৌদি আরব প্রবাসী তাসলিমা বেগম জানান, মাসিক মুনাফা ভিত্তিতে এই সমিতিতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে টাকা নিয়ে সমিতি তালা বন্ধ করে প্রতারকরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।তার সন্তানদের পড়ালেখা ও পরিবারের দৈনন্দিন জীবন অসম্ভব পড়েছে। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
এমন করে চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার চৈতি আহম্মেদ মুন্নি এফডিআর বাবদ এককালীন ৫ লাখ প্রদান করেন এবং দৈনিক দুটি বইয়ের ৪০০ টাকা করে ২ বছরে সঞ্চয় জমা করে আড়াই লাখসহ মোট সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
একইভাবে তাছলিমা আক্তার এফডিআর বাবদ এককালীন আড়াই লাখ, পিঠা বিক্রেতা মোসা. কদ বানু এফডিআর বাবদ এককালীন ৩০ হাজার টাকা, গার্মেন্টস কর্মী জায়েদা খাতুন এফডিআর বাবদ ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা, প্রবাসি ময়না আক্তারের দেড় লাখ টাকা এফডিআর বাবদ জমা দেন, নারগিছ ৫০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেছে ১০ হাজার টাকা। এমন অভিযোগের শেষ নেই।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, খেয়ে না খেয়ে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলাম সমিতিতে। সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারকরা। তারা কি মরণকে ভয় পায় না। আল্লাহতালা তাদের বিচার করবে।
ভুক্তভোগী এসব গ্রাহকদের দাবি, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার ও প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য বারবার অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সমবায় বিষয়ক অফিসার আলমগীর আজাদ ভূঁইয়া বলেন, ৭০ জন গ্রাহকের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ দিয়েছেন। হয়তো প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরো গ্রাহক থাকতে পারে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতি তালা বন্ধ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমার কাছে লিখিতভাবে দায়ের করেছেন। বিষয়টি সমবায় অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।