রাজবাড়ী পৌরসভার উদ্যোগে তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (ইউজিআইআইপি-৩) প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার জন্য ৩৪টি ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে নিয়মিত ময়লা সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে কাজে আসিনি ডাস্টবিনগুলো। দীর্ঘদিন ডাস্টবিনে ময়লা থাকায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌরসভার বাসিন্দা।
এদিকে রাজবাড়ী পৌরসভার নির্মিত এসব ডাস্টবিন থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সঠিক সময়ে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে না নেওয়ার কারণে দুর্গন্ধে দুর্ভোগ বাড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভে ভেঙে ফেলেন এসব ডাস্টবিন। এতে পৌরসভার ক্ষতি হয়েছে কয়েক লাখ টাকা।
সরকারি এসব সম্পদ ক্ষতির পেছনে ইন্ধন রয়েছে খোদ পৌর কর্তৃপক্ষের, এমনটাই অভিযোগ পৌরসভার বাসিন্দাদের।
এদিকে সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারী ও ইন্ধনদাতাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে রাজবাড়ীর নাগরিক কমিটি।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে রাজবাড়ী পৌরসভার ৫৬ হাজার বাসিন্দার জন্য তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (ইউজিআইআইপি-৩) প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৪টি ডাস্টবিন নির্মাণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি ডাস্টবিনের জন্য ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার টাকা। পৌরসভার প্রতি বস্তিতে ২টি করে মোট ১৭টি বস্তিতে ৩৪টি ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়। এসব ডাস্টবিনগুলো পৌরসভার কনজারভেন্সি শাখার সেবক দ্বারা পরিষ্কার করা কথা ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সজ্জনকান্দা জমিদার সড়কের শেষ মাথায় পৌরসভা থেকে ডাস্টবিন স্থাপন করলেও তা সঠিক সময়ে পরিষ্কার না করায় স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে ভেঙে ফেলেছে।
একই চিত্র সজ্জনকান্দার আমবাবুর বাড়ির সড়ক এলাকায়। সেখানে একটি ডাস্টবিন থাকলেও দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় স্থানীয়রা সেটা ভেঙে ফেলে।
আবার হাসপাতাল রোডের টেকনিক্যাল স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে জীবনের দোকানের পাশে একটি ডাস্টবিন রয়েছে। সেখানে দেখা যায় ময়লা-আবর্জনা স্তুপ হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ময়লা না নেওয়ার কারণে তা সড়কের ওপরে চলে এসেছে। এতে পথচারীদের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। একই চিত্র পৌরসভার অন্যান্য ডাস্টবিনগুলোর।
এলাকাবাসী জানান, টাকা না দিলে ডাস্টবিনের ময়লা সরিয়ে নেয় না পরিছন্নতাকর্মীরা। অভিযোগ দিলে ডাস্টবিন ভেঙে ফেলার ইন্ধন দেয় খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ। রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সজ্জনকান্দা জমিদার সড়কের শেষ প্রান্তে পৌরসভা থেকে নির্মিত একটি ডাস্টবিন রয়েছে। এই ডাস্টবিন থেকে পরিছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত ময়লা না নেওয়ার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে নির্ভয়ে নিজ এলাকার ডাস্টবিন ভেঙে ফেলছেন স্থানীয় আব্দুল্লাহ। তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দা।
আব্দুল্লাহ বলেন, পৌরসভা থেকে নিয়মিত ময়লা না নেওয়ার কারণে ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমাদের পথচারীসহ স্থানীয়দের চলাচলে অসুবিধা হয়। তাই আমরা এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে এটা ভেঙে ফেলেছি। যাতে এখানে কেউ ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড সজ্জনকান্দা এলাকার বাসিন্দা অঙ্গন বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নিলে মাসে তারা ১০০ টাকা করে নেয়। কিন্তু পৌরসভা থেকে ডাস্টবিন করার পর এলাকার বাসিন্দারা ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে। এতে করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাসে প্রত্যেক বাড়ি থেকে ১০০ টাকা করে পাচ্ছে না। এজন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী ডাস্টবিন থেকে ময়লাও নিচ্ছে না।
রাজবাড়ী জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে ডাস্টবিন পদ্ধতিতে ময়লা-আবর্জনা তারা যেন সুনির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে পারে, এজন্য পৌরসভা ডাস্টবিন স্থাপন করেছিল। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে পরিচ্ছন্নতার অভাবের কারণে কর্তৃপক্ষের একটা অংশের ইন্ধনে এই ডাস্টবিনগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। কেননা ভেঙে ফেলা বা ধ্বংস করা কোন সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি না। সমস্যা সমাধান করতে হলে এটাকে কিভাবে কার্যকরী করা যায় ও বাস্তবমুখী করা যায় সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে। এ সময় তিনি সরকারি সম্পদ বিনষ্টকারী ও ইন্ধনদাতাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
রাজবাড়ী পৌরসভার প্রশাসক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ডাস্টবিন থেকে ময়লাগুলো যেন নিয়তিম পরিষ্কার করা হয়, সেটি যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া সরকারি সম্পদ ভাঙার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে রাজবাড়ীতে ডাস্টবিনগুলো দ্রুত সংস্কার করে রাজবাড়ী পৌরসভা নাগরিক ভোগান্তি দূর করবে, এমনটি প্রত্যাশা পৌরবাসীর।