গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিসমিল্লাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ট্রমা জেনারেল হাসপাতালের টয়লেট থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ প্রথমে এক কিশোরীকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় তার চাচাতো ভাইকে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতালের এক আয়া টয়লেট পরিষ্কার করার সময় ময়লার ঝুড়িতে টিস্যু দিয়ে ঢাকা একটি নবজাতকের মরদেহ দেখতে পান। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিশ্চিত হন যে নবজাতকটি জন্মের আগেই মৃত ছিল।
হাসপাতালের পরিচালক মো. শহীদ মুন্সি এদিন রাতেই অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরদিন সকালে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পেনাল কোডের ৩১৮ ধারায় নবজাতক জন্ম গোপন করার অপরাধে মামলা (নং-৫) রুজু হয়।
মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা যায়, এক কিশোরী টয়লেটে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বাইরে বেরিয়ে যান। এরপরই পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী স্বীকার করে, গর্ভপাতের পর নবজাতকটি মৃত অবস্থায় টয়লেটে ফেলে আসে সে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আটক করে তার চাচাতো ভাইকে- যিনি ধর্ষণের মাধ্যমে তাকে অন্তঃসত্ত্বা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগীর মা বলেন, শুক্রবার সকালে মেয়ের পেটে ব্যথা হলে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাই। সেখানে কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিসমিল্লাহ ডায়াগনস্টিকে যায় মেয়ে। দুপুর ১২টার দিকে যায়, আর দুপুর ২টার পর জানতে পারি হাসপাতালের টয়লেটে নবজাতকের মরদেহ পাওয়া গেছে।
কিশোরীর দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে, গত ৬ মার্চ বিকেলে তার চাচাতো ভাই তাকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে একাধিকবার একই ঘটনা ঘটে। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে।
ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে রোববার (৫ অক্টোবর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নতুন মামলা (নং-৭) দায়ের করেন। এরপর রাতেই অভিযুক্ত কিশোরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
একইদিন দুপুরে পৃথক দুটি মামলায় কিশোর ও কিশোরীকে আদালতে পাঠানো হয়। কিশোরীকেও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা দায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা পুরো ঘটনা তদন্ত ও অপরাধীদের শনাক্ত করি। পরে পৃথক দুটি মামলায় কিশোর ও কিশোরীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।