ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের একটি অজপাড়া গাঁয়ের নাম হিরালদি। সেখানে ২ হাজার জনগণের বসবাস। শিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হরেক শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উপকৃত করার চেতনাধারায় পরিস্ফুটিত মানুষের ছিল বড্ড অভাব।
সেই গায়ের একজন আব্দুল করিম। তার চিন্তা-চেতনা ছিল হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়, এমন কিছু করতে হবে। পরিবার-পরিজনের সাথে আনুষ্ঠানিক আলাপ শেষে মানবসেবায় হাজী আবদুল করিম নিজের অর্ধাঙ্গিনী সামর্তবানকে সাথে সৃষ্টি করেন হাজী আবদুল করিম ও সামর্তবান ফাউন্ডেশন।
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনটি আজও উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের অসহায় মানুষের বাতিঘর হয়ে আলোকিত করছে সামাজিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতায়।
বিশেষ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হাজী আব্দুল করিম সামর্তবান ফাউন্ডেশন থেকে ভ্যানগাড়ি বিতরণ, পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট কর্মসূচির আওতাধীন দৈনিক ৫ হাজার লিটার পানি সরাবরাহ, এসএসসি দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নীতিমালার আলোকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান এবং দাতব্য কার্যক্রম, মসজিদ ও মাদরাসার পাশাপাশি খাদ্য ত্রাণ, স্বাস্থ্য সেবাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব মানুষের জন্য মোট ৫টি প্রকল্প চালু রেখেছেন। তার মধ্যে জনসম্মুখে কার্বন নিঃসরণের উদ্যোগের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশংসায় ভাসছে জন উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম।
জানা গেছে, মানবতার বাতিঘর হাজী আবদুল করিম সামর্তবান ফাউন্ডেশন ২০২৪ সালে সমাজ উন্নয়নে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী হিসেবে ভূষিত হন। সেই সম্মানে হাজী আবদুল করিম সামবর্তান ফাউন্ডেশনের নামটি উপজেলার সামাজিক সংগঠনের তালিকায় সর্বত্র সমাদৃত হয়ে উঠেছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ছিল ওই ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবালসহ সাংবাদিক ও সুধীজনের অনেকেই ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের উপস্থিত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি চিত্র সদস্য রফিকুল ইসলাম সকলের সামনে তুলে ধরেন। শুরু থেকে গত ৩ বছরের সামাজিক কার্যক্রম তুলে ধরলে উপস্থিত সুধীজনরা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে একাত্মতা প্রকাশ করেন পাশে থাকার।
গত মঙ্গলবার ছিল প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে ৫৬ জন সম্ভাবনাময় প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিনামূল্যে সংগঠনের মালিগ্রাম হিরালদী কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। উপকারভোগী ও উপস্থিত সুধীজনকে জানানো হয়, সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের সামাজিক কাজের অগ্রগতি সকলের সার্বিক সহযোগিতায় অব্যাহত থাকবে।
সেলাই মেশিন গ্রহণকারী দীপ্তি বিশ্বাস বলেন, সংসারে অভাব চলছে। কিন্তু আমাকে তালিকায় ওই ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে একটা সেলাই মেশিন দিয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে বলে অনুভূতি প্রকাশ করেন।
হাজী আবদুল করিম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা ৪ ভাই। বড় ভাই নজরুল ইসলাম। তিনি আমেরিকা প্রবাসী। অন্য ৩ ভাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। বাবা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু বাবা আজ নেই। মা বেঁচে আছেন। মায়ের নির্দেশনায় ও বড় ভাইয়ের পুর্ণাঙ্গ সহযোগীয় এবং পরিবার পরিজনের শিশু বাচ্চাদের টিফিনের টাকাও ফাউন্ডেশনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি পুনরায় সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধান অতিথি বলেন, হাজী আবদুল করিম ও সামবর্তানের সামাজিক কর্মকাণ্ড ও মানবিক কাজের বিষয়টি তিনি অবগত। সরকারের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের জন্য কিছু করতে চাইলে হাজী আবদুল করিম সামর্তবান ফাউন্ডেশের মতো সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উপজেলা প্রশাসন মানবিক কাজের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মানবতার বাতিঘর হাজী আবদুল করিম সামর্তবান ফাউন্ডেশনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় উন্মুক্ত বলে আশ্বস্ত করেন প্রধান অতিথি।