পরীক্ষা চলাকালে স্ত্রীর সিট দেখতে বাধা, কলেজে যুবকের রামদা নিয়ে মহড়া

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪২ এএম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আল সাদ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। কলেজটিতে তার স্ত্রীর ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন জোরপূর্বক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বাঁধা দেওয়ায় ওই যুবক এমন কাণ্ড ঘটায়।

কলেজ সূত্র ও কলেজটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক প্রবেশ করে। পেছনে বসা আল সাদের হাতে বড় আকৃতির দেশীয় অস্ত্র রামদা। সেটি উচিয়ে সে এগিয়ে আসে। এ সময় অনেকে দৌড়ে সরে যায়। এরপর কলেজের মূল ভবনে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর নেমে বেরিয়ে যায়। 

জানা যায়, গত মঙ্গলবার আলফডাঙ্গা পৌরসভার কামারগ্রামে অবস্থিত আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতারা কলেজে এসে অধ্যক্ষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। বর্তমানে ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক এবং তার মামা মো. আমিরুল ইসলাম পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা অপর যুবকের নাম সাদি (২৫) এবং তিনি পৌরসভার শ্রীরামপুর এলাকার গফুর খাঁর ছেলে। 

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে কথা হয় কলেজের অধ্যক্ষ এম এম মজিবুর রহমান মুজিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই যুবকের স্ত্রী ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি পরীক্ষা চলাকালীন গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন কলেজের পিওন নাজমুল তাকে বাধা দিলেও তা না মেনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। 

অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান আরও বলেন, কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আমি তাকে বের হওয়ার অনুরোধ করি। তখন বলে আমার স্ত্রী কোথায় বসেছে দেখব এবং উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আমাকে হাত উঁচু করে বলতে থাকে, আমাকে চিনেন, আমি দেখো নেব, থানা পুলিশ দেখতেছি। তখন পরিসংখ্যানের শিক্ষক সমীর কুমার বিশ্বাস তার হাত ধরে বাধা দিলে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এরপর কলেজ থেকে বের হয়ে ২০ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে রামদা হাতে এসে কলেজের ভেতরে ঢুকে ত্রাস সৃষ্টি করে। তখন আমিসহ সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে ইউএনও, ওসিকে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ আসে, এর আগেই সে চলে যায়। 

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতারা এসে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ওই যুবক মুচলেকা দিয়েছে। 

জানা যায়, এ ঘটনায় আল সাদের পক্ষে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে মৌখিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খসরু। 

আব্দুল মান্নান মিয়া আব্বাস বলেন, ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় আল সাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসনাত বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে কলেজটিতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল, ওই যুবককে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

SN