সিংগাইরে শত কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি, অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচন

রাজধানীর কিচেন হাউজ হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জের সিংগাইর। প্রায় শত কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে চলেছেন সিংগাইরের চাষিরা। উঁচু জমি আর সঠিক পরিচর্যার ফলে এই অঞ্চলের শাহী পেঁপের চাহিদা অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশি। এতে প্রতি মৌসুমে শত কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি করেন চাষিরা। এই উপজেলার অধিকাংশ সবজির উপর নির্ভরশীল ঢাকা। 
 
জানা যায়, গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতির নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে সিংগাইরের সবুজ শাহী পেঁপে। এই অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে বারোমাসি জাতের পেঁপে আবাদে। উপজেলার কৃষি জমির প্রায় শতকরা ৮০ শতাংশ জমিতে পেঁপের আবাদ হয় এবং প্রতিটি গাছ থেকে আনুমানিক এক মণের মতো পেঁপে পেয়ে থাকেন চাষিরা।
 
 
অনূকূল আবহাওয়া, উঁচু জমি ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়াতে সিংগাইরে পেঁপের আবাদ দিনদিন বাড়ছে। প্রতিটি মৌসুমে এই অঞ্চল থেকে শত কোটি টাকার পেঁপে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।
সিংগাইরকে রাজধানীর কিচেন হাউজ বলার কারণ অধিকাংশ সবজির চাহিদা মেটে এই অঞ্চল থেকে। উর্বর মাটি ও বিষমুক্ত হওয়াতে সিংগাইরের পেঁপের চাহিদা দেশের বাজারে অনেকটাই তুঙ্গে। রাজধানীর নিকটবর্তী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে পাইকাররা বাগান থেকেই পেঁপে ক্রয় করে নিয়ে দেশের বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ করে। একটি সময় পেঁপের আবাদ করলে মানুষ উপহাস করেছে, আর সেই পেঁপে এখন এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
 
 
কৃষি বিভাগের মতে, ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে এবং পেঁপের চাহিদা পূরণে আরও বড় ভূমিকা রাখবে এই অঞ্চলের আবাদকৃত পেঁপে। সিংগাইরের পেঁপে আবাদ শুধু সাফল্য দেখায়নি, এ যেন এক স্বনির্ভরতার প্রতীক। গ্রামীণ ও কৃষি অর্থনীতিতে শত কোটি টাকার এক বিশাল ঢেউের উত্থান ঘটিয়েছে। 
 
জয়মন্ডপের মিরের চর এলাকার পেঁপে চাষি  জালাল বেপারী বলেন, ৩ বিঘা জমিতে পেঁপের আবাদ করে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এই পেঁপে একবার আবাদ করলে ৯ মাস অনায়াসেই বিক্রি করা যায়। সিংগাইরের পেঁপের আবাদের কারণ হলো, বৃষ্টিসহ বর্ষার পানি না আসায় যতদিন ইচ্ছে ততদিন রেখে পেঁপে বিক্রি করা যায়। এই অঞ্চলের পেঁপের চাহিদা হওয়ার কারণ স্বাদ ও মানে ভালো। প্রতিটি গাছে প্রায় এক মণের মতো পেঁপে ধরে এবং অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হয়।
 
একই এলাকার আলমঙ্গীর নামের আরও এক চাষি বলেন, সিংগাইর প্রথম দিকে দুই-এক জন পেঁপের আবাদ করে লাভবান হওয়ায় দিনদিন এই আবাদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় পেঁপে আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে এই অঞ্চলের পেঁপের চাহিদা বেড়েছে। 
 
 
পেঁপে বাগানে আছিয়া বেগম নামের এক নারী কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার স্বামী ১০ বছর ধরে পেঁপের আবাদ করে আসছি। এই পেঁপে চাষের আগে অন্যের জমিতে কাজ করতো আমার স্বামী। তেমন কোন জায়গ- জমি ছিলো না আমাদের। তবে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে প্রথমে পেঁপের আবাদ করি। পেঁপে বিক্রির টাকা জমিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা জমি কিনেছি ১০ বছরে। এখন নিজের জমিতে পেঁপের আবাদ করছি, ঘরের-বাইরের দুজনেই একসঙ্গে কাজ করছি। 
 
সিংগাইরের কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. রিদওয়ানুল হক বলেন, সিংগাইরে ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় শত কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি হয়েছে। কথিত আছে, ঢাকার কিচেন হাউজ হিসেবে পরিচিত এই সিংগাইর। এই অঞ্চলটা উঁচু হওয়াতে পেঁপের আবাদটা বেশি করে থাকে। এখানে শাহী জাতের পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে এবং এই পেঁপে গাছে জৈব সার ব্যবহার করায় বড়ও বেশি হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ টন ফলন পেয়ে থাকেন চাষিরা।