ভূমিকম্পে নিহত শিশু ফাতেমার দাফনে থাকতে পারেননি বাবা-মা

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পের সময় রুপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া সড়কের পাশের দেয়াল ধসে পড়ে শিশু ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ১০ মাস বয়সি শিশু ফাতেমা। 

বাবা-মা ছাড়াই বাড়ির পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয় শিশু ফাতিমাকে। জানাজায় অংশ নিতে পারেননি ফাতিমার বাবা আব্দুল হক। মেয়েকে শেষ বিদায় জানাতে পারেনি মা কুলসুম।

ফাতিমা যে সময় দেয়াল চাপায় মারা যায় সেসময় মা কুলসুমও গুরুতর আহত হয়। কুলসুমকে নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন আব্দুল হক। যার কারণে মেয়ের জানাজায় ও দাফনে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

জানা গেছে, দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল আব্দুল হক ও কুলসুম বেগম দম্পতির। কিন্তু শুক্রবারের ভূমিকম্পে মুহূর্তেই ওলট-পালট হয়ে যায় তাদের সংসার। ঘটনার সময় পাশে নানাবাড়িতে ছিল আরেক মেয়ে দুই বছরের নুসাইবা জান্নাত। এ কারণে তার কিছু হয়নি।

আব্দুল হক পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে ব্যবসা করেন। আহত স্ত্রীকে ঢাকায় আনা হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন তিনি। 

প্রতিবেশী ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, ভূমিকম্পের সময় ফাতেমা মায়ের কোলে ছিল। ধসে পড়া দেয়াল সরিয়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেসময় মা কুলসুম অচেতন ছিলেন।

তিনি আরও জানান, বিকেলে বাবা-মাকে ছাড়াই বাড়ির পাশে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে ফাতেমাকে দাফন করা হয়।

ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন জানান, আব্দুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন। এখন পর্যন্ত তিনটি হাসপাতালে গেলেও ভর্তি করাতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে কুলসুমকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর শয্যা না থাকায় সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে তাকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও ভর্তি নেওয়া হয়নি।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার ক্ষমতা নাই। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় আছি।

এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে পরিষদের এই গ্রামটিতে বহুতল ভবন নেই। অধিকাংশই একতলা বা দুইতলা, যা নিয়ম ও নকশা মেনে নির্মাণ করা হয়নি। যে দেয়ালটি ধসে পড়েছে সেটির কোনো পিলার ছিল না।

তিনি আরও বলেন, দেয়ালটি অন্তত ১০ ফুট উঁচু ছিল। কিন্তু রডের কোনো কাজ সেখানে নেই। এমনকি উঁচু দেয়ালের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কোনো পিলারও ছিল না। ইউপি এলাকাগুলোতে অনেকে নিয়ম-কানুন মেনে বাড়ি নির্মাণ করেন না। সেখানে তদারকিরও কিছু ঘাটতি আছে। আমরা আগামীকাল মাইকিং করে দেবো। গ্রাম পুলিশকে এ ধরনের অস্বাভাবিক রকম উঁচু দেয়াল বা অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে তদারকি করার জন্য। ঝুঁকিপূর্ণ দেয়ালগুলো আমরা ভেঙে দেবো।

তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারকে দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যও সহযোগিতা করা হবে।

আহত কুলসুমকে এখনো হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সাইফুল বলেন, স্বজনরা জানিয়েছিলেন, তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তারা যে শয্যা পাচ্ছেন না বা কোথাও এখনো ভর্তি হতে পারেনি, এটা জানা ছিল না। হয়তো তথ্যের ঘাটতি হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।