সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির মৌসুম। কর্মব্যস্ততা শুরু হবে শুঁটকি পল্লীতে। জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা নিয়ে মৎস্য আহরণে সমুদ্রে যাত্রা করছে জেলেরা। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় উপকূলের জেলে-মহাজনেরা।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাত ১২টার পরপরই দুবলার চরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন জেলেরা। আগামী পাঁচ মাস তারা সেখানে থাকবেন। তৈরি করবেন বিভিন্ন জাতের মাছের শুঁটকি।
সংশ্লিষ্ট জেলেরা জানায়,সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগ থেকে মাছ সংগ্রহের অনুমতি সাপেক্ষে জেলে ও বহদ্দাররা (জেলে মহাজন) দুবলার চরে প্রবেশ করে। প্রতি বছর বন বিভাগকে রাজস্ব দিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি পায়। এছাড়া আহরিত শুঁটকি মাছ নিয়ে ফিরে আসার সময় মাছভেদে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে থাকে। শুধুমাত্র সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি জেলে পরিবারগুলো। বরং দিন দিন অবস্থার অবনতি ঘটছে। ক্রমবর্ধমান ক্ষতির মুখে ইতোমধ্যে পূঁজি ও জাল-নৌকা হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করেছে অনেকেই।
তারা জানায়, সমুদ্রে যাত্রার জন্য তারা চড়া সুদে টাকা নিচ্ছেন সুদ কারবারিদের কাছ থেকে। কেউবা আবার এনজিও, ব্যাংক ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন। ঋণ, সুদের বোঝার সঙ্গে দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই পাঁচ মাসের এক অনিশ্চিত জীবন শুরু করতে চলছেন তারা।
বহদ্দার শুভংকর হালদার বলেন, প্রতি বছর আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সমুদ্রে যাই। এ বছরও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ করেই সাগরে যাচ্ছি। সরকারিভাবে আমরা তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই না। তারওপর জলদস্যু-বনদস্যুর উৎপাত ও মুক্তিপণ আদায়সহ আসাধু বনরক্ষীদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এখন আছে কিনা তা জানি না। তবে শুনেছি উৎপাত নাকি আবার বেড়েছে।
জেলে সমর হালদার বলেন, বন বিভাগের পাস নিয়েই আমরা রওনা হই সাগর পাড়ের দুবলার চরে। ধার দেনা করেই আমাদের যেতে হয় সাগরে। তবে অনেকে এবার সুদে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে টাকা আনতে হচ্ছে। এছাড়া ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই আমরা হাজার হাজার জেলে দুবলায় যাত্রা করি ।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, পাস পারমিট হাতে পাওয়ার পর রোববার সন্ধ্যায় পর সকল জেলেরা সমুদ্র দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন,গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ছয় কোটির মত। এবারও আমাদের আশা আছে সাত কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায় হবে।