গর্ভপাত ও মাতৃত্বকালীন সেবা পাওয়া যেখানে দুঃস্বপ্ন ছিল, সেখানে নতুন করে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ নিয়েছে। আর সেই ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে চিকিৎসাসেবার মান প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, ডা. মো. শাহিন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি স্বাস্থ্যসেবার দৃশ্যমান নজির স্থাপন করেছেন। সেই সুফল পাচ্ছে মোংলা উপজেলার সাধারণ মানুষ। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ইতোমধ্যেই স্থানীয় এলাকাবাসীর আস্থার ঠিকানা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলায় একটি মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরিতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ডা. মো. শাহিন।
২০২২ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ডা. মো. শাহিন এ হাসপাতালের যোগদান করার পর চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি হাসপাতালকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় হাসপাতালের চারপাশ হয়ে উঠে সবুজের সমারোহ।
ডা. মো. শাহিন ২০২৩ সালের জুন মাসে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি মেরামত সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম শুরু করেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় সাড়া ফেলেছে। যেখানে প্রতিমাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়ে থাকে। সাধারণ রোগীর একমাত্র ঠিকানা এখন মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পাশাপাশি এখানে বিশেষায়িত ডেলিভারী কর্নার রয়েছে।
ইতোমধ্যে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য প্যাথলজি বিভাগে সকল প্রকার পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফী ও ইসিজি মেশিন চালু রয়েছে। যে কোনো সমস্যায় ৩ টাকার একটি শুভেচ্ছা টিকিট কেটে প্রয়োজনীয় ডাক্তার এবং ঔষধ নিতে পারবেন মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।
হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা চোখে পড়ার মতো। পূর্বে যেখানে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০০-২৫০ জন এখন তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০০- ৫০০ জনে। রোগীরা প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত ঔষধ এবং সেবা নিতে পারছেন বলে ক্রমেই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বড় অর্জন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (হেলথ সিস্টেমস স্ট্রেংদেনিং-এইচএসএস) ফেব্রুয়ারি-২০২৪ রেটিংসে সারাদেশের মধ্যে একাদশ স্থান অর্জন করেছে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুধু তাই নয়, খুলনা বিভাগের মধ্যে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রথম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর অবস্থান ছিল খুলনা বিভাগে ১৭তম এবং সারা বাংলাদেশে ১২৯তম।
করোনার সময়ে হাসপাতালের নিয়মিত টিকা কেন্দ্রের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতেও টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মাঠ পর্যায়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিকিৎসা নিতে নিতে আসা জোৎসা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বড় ডাক্তারের কাছে টাকার অভাবে যেতে পাই না। এখন এই হাসপাতালে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। তিন টাকা টিকিট কাটি সেবা ও ঔষধ পাই।
আজহারুল ইসলাম নামের এক সেবাপ্রত্যাশী বলেন, এখন আর চিকিৎসার জন্য দূরে যেতে হয় না। তিন টাকা টিকিটের বিনিময়ে ডা. এর পরামর্শসহ বিনামূল্যে ঔষধ পাওয়া যায়। কম খরচে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। আগে সেবার মান এতোটা ছিল না।
সাংস্কৃতিক সংগঠক জানে আলম বাবু জানান, ডা. শাহিনের সার্বিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিনামূল্যে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের কারণে সরকারি এ হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের আস্থা বেড়েছে। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে এখন কেউ ফিরে যায় না। মেডিকেল অফিসাররা অতি যত্নসহকারে রোগীদের কথা শোনেন এবং চিকিৎসাপত্র দেন।
জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিন বলেন, হাসপাতাল এখন সাধারণ রোগীর নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে গেছে। নরমাল ডেলিভারী, সিজার, আল্ট্রাসনোগ্রাফী এবং ইসিজিসহ সকল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন খুব সহজেই করতে পারছে। পুরো হাসপাতাল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফসহ অন্য স্টাফদের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার কারণে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২৩ মে ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটি চালু হয়। এরপর ২০০৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয় সরকারি এ হাসপাতাল। হাসপাতাল চালুর পর ২০২৩ সালের ১লা জুন বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীনের তত্ত্বাবধানে অপারেশন থিয়েটারটি চালু হয়। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহের সোমবার নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অপারেশন সেবা চালু রয়েছে।