বেপরোয়া আহরণ: বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির বন্ধু শামুক

নড়াইলের ৩ উপজেলার খাল-বিল ও জলাশয় থেকে বেপরোয়া আহরণ, জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ও মৎস্য বিভাগের উদাসীনতায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী ও উপকারী জলজ প্রাণি শামুক হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী শামুকের বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে। 
 
এক সময় খাল-বিল ও জলাশয়ের পানিতে প্রচুর পরিমাণে শামুক দেখা গেলেও এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। শামুক জলজ পরিবেশে ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও তাদের ডিম খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফসলি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শামুকের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু শামুক সংরক্ষণে নড়াইল জেলা মৎস্য বিভাগ উদাসীন।
 
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, শামুক সংরক্ষণে মৎস্য বিভাগের পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও নজরদারির অভাব রয়েছে। যার ফলে শামুক নির্বিচারে নিধন হচ্ছে। মৎস্য চাষিরা মাছের খাবার হিসেবে শামুক ব্যবহার করছেন। কিছু মানুষ খাল-বিল থেকে অবাধে শামুক সংগ্রহ করে তা মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করছেন।
 
সদর উপজেলার বড়েন্দা এলাকার মৎস্য চাষি পলাশ বিশ্বাস বলেন, আমরা ৩০ টাকা কেজি দরে শামুক কিনে মাছকে খাওয়ায়। শামুক যে জীবাণু থাকে, সেই জীবাণু যে মাছে যায়, এটা আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে মৎস্য অফিস থেকে আমাদের কখনও কিছু বলা হয়নি।
আরেক মৎস্য চাষি সবুজ মিয়া জানান, মৎস্য অফিস থেকে কখনও কেউই আমাদের এখানে আসেননি। তারা আমাদের কোনো খোঁজ খবরও নেন না।
 
সিবানী বিশ্বাস নামে এক নারী জানান, বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সকালে বিল থেকে আমাদের এলাকার অনেক নারী-পুরুষ শামুক সংগ্রহ করেন। এই শামুক তারা মৎস্য চাষিদের কাছে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে তাদের প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়।
 
কালিয়া উপজেলার এক দিনমজুর বলেন, সংসার চালানোর জন্য তিনি খাল-বিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। এতে তার প্রতিদিন ৫০০ টাকার মত আয় হয়ে থাকে।
 
নড়াইল (সদর ও কালিয়া) উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান বলেন, (শামুক সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায়) মাছের খাদ্য হিসেবে শামুকের ব্যবহার আমরা নিরুৎসাহিত করে থাকি। কারণ কাঁচা শামুক খাওয়ানোর ফলে মাছের শরীরে রোগ জীবাণু এবং গ্যাসের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে ওই মাছ খেলে মানুষের শরীরেও নানা রোগজীবাণু ছড়ায়। শামুক মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। খাল-বিলে বেশি পরিমাণ শামুকের বিচরণ থাকার কারণে পানি ও মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। শামুক মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার না করার জন্য ঘের মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
 
নড়াইল জেলা মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান  বলেন, শামুক সংরক্ষণে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।