জোর করে বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হেনস্থা করে বৃদ্ধ বাউল ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দের চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনায় করা মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরী থেকে মজনু মিয়া (৪৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা এবং মামলার সাত নম্বর আসামি।

তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তার মজনু মিয়া ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

এর শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে জেলার তারাকান্দা থানায় ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করেন, ওইদিন (ঘটনার দিন) আমি বাজারে গেলে তারা আমাকে জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দিয়েছে। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনও আল্লাহর কাছে বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় এখন আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।

তিনি আরও বলেন, আমার চুল দাড়ি কাটার সময় বাইরের ২ জন লোকসহ প্রায় ৮ থেকে ৯ জন লোক ছিলো। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন এবং মজনুও ছিলো। তারা এখনো এলাকায় আছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তারা আমার মান ইজ্জত মারছে, আমি বিচার চাই।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা সড়কের পাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। একেবারেই গরীব একজন মানুষ। হালিম উদ্দিন কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ব্যক্তি না।

তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে উনাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেশভূষাকে বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় টুকটাক কবিরাজী করতেন। নিজের মতো চলতেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীরও কোনো অভিযোগ ছিল না।

গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তার মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেন। তখন হালিম উদ্দিন প্রাণপণ চেষ্টা করেন, তাদের আটকাতে। কিন্তু আগত ব্যক্তিদের শক্তির সাথে তিনি আর পেরে উঠেননি। এতে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েন। ঘটনার নিন্দা ও বিচার দাবিতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এ ঘটনাকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ‘মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।