কারখানার এসিডে ৪ গরুর মৃত্যু, কান্না থামছে না অসহায় কৃষকের 

জামালপুর সদর উপজেলায় পুরনো ব্যাটারির এসিড ও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় এসিড মিশ্রিত ঘাস ও পানি খেয়ে ৪টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও ৮টি গরু অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতের নেওয়া হয়েছে।
 
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
 
নিহত গরুগুলোর মালিক স্থানীয় কৃষক হেকমত আলী। তার দাবি, গরুগুলোর মৃত্যুর ঘটনায় তার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ডিগ্রীরচর এলাকায় অবৈধভাবে পুরনো ব্যাটারি পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার কারখানা পরিচালনা করছিলেন শেরপুর জেলার বালুখোড়া এলাকার মো. আপেল ও লিখন। তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পুরনো ব্যাটারি থেকে সিসা ও অ্যাসিডসহ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেলে আসছিলেন। এতে আশপাশের কৃষিজমি ও পানি দূষিত হয়ে পড়ে। আজ সকালে ওই কারখানার পাশের জমিতে থাকা ঘাস ও পানি খেয়ে হেকমত আলীর ১২টি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৪টি গরু মারা যায় এবং বাকি ৮টি গরু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
কৃষক হেকমত আলী অসহায় কণ্ঠে বলেন, আমার সব গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হে আল্লাহ, আমি এখন কী করব! গরুই ছিল আমার জীবিকার একমাত্র ভরসা।
 
তার দুই মেয়ে ভাবনা ও লিমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের কোনো জমিজমা নেই। বাবার গরুর দুধ বিক্রি করেই সংসার চলত, পড়াশোনার খরচ উঠত। এখন সব শেষ, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যাটারি কারখানায় বর্জ্য পোড়ানোর সময় ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া ও তরল পদার্থের কারণে শুধু গবাদিপশুই নয়, আশপাশের হাঁস-মুরগি ও ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
জামালপুরের নরুন্দি পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মো. সজিব বলেন, ব্যাটারি কারখানার ১৮ জন শ্রমিককে পুলিশ হেফাজতে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়েছে। জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল ব্যাটারি কারখানার সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।
 
জামালপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ৪ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেছে। মৃত গরুগুলোর ময়নাতদন্ত চলছে। নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এছাড়া অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।