ম্যাংগো ক্যালেন্ডার

ঘোষণা দিয়েও রাজশাহীর বাজারে মিলছে না আম

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ম্যাংগো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকেই গুটি জাতের আম পাড়া ও বাজারজাত শুরু হওয়ার কথা। নির্ধারিত দিনের তিন দিন পরও বাজারে দেখা মিলছে না পাকা গুটি আমের। আম পরিপক্ব না হওয়ায় বাগান মালিকরা আম নামাতে অনাগ্রহী বলে দাবি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

শনিবার (১৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা আম না থাকলেও কাঁচা বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দুই এক জন বিক্রেতা সাতক্ষীরা থেকে আনা পাকা আম বিক্রি করছেন। তবে আমের ব্যবসা জমতে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন আড়তদাররা।

এদিকে রাজশাহীর অন্যতম আমের হাট জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। এই হাটে এখনও শুরু হয়নি আম বেচা-বিক্রি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আম পরিপক্ব হতে সময় লাগবে আরও সপ্তাহখানেক। আমের হাটগুলো জমতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০ দিনের মতো। তবে তীব্র তাপদাহে আমের আকার ছোট ও পরিমাণে কম হলেও ভালো দামের আশা ব্যবসায়ীদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন।

জানতে চাইলে রাজশাহীর সাহেব বাজারের আম ব্যবসায়ী শাহিন ইসলাম বলেন, গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে, কিন্তু আমরা এখনও পাইনি। আরও ১০ দিনের মতো সময় লাগবে। এবার গাছে পাকতেই একটু দেরি হচ্ছে। পুরোপুরি পরিপক্ব হলেই নিয়ে আসবো। গতবার আম একটু বেশি ছিল, এবার একবারেই আম কম। তাই দামটাও একটু বেশি হবে।

রমজান আলী নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, গুটি আম বাজারে এসেছে। কিছু কিন্তু আম পাকেনি, ভালো না। নষ্ট আর টক, ঠিকমতো পরিপক্ব হয়নি। দুই চার জন বাগান মালিক নিয়ে আসছেন দাম বেশির কারণে। এ সপ্তাহ গেলে হয়তো খাওয়ার মতো হবে।

রাজশাহীর অন্যতম আম উৎপাদনকারী উপজেলা বাঘার আম চাষি সোহান ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের ডেটে তো আর আম পাকে না। তাদের তারিখে গুটি আম পাকেনি। তবুও কেউ কেউ পাড়া শুরু করেছে। আরও ১০ দিনের মতো সময় হলে আমটা ভালোভাবে বাজারে দেওয়া যাবে।

আমের আড়তদার রায়হান আলী বলেন, আরও তিন দিন পর আম পাওয়া যেতে পারে। আম পুষ্ট কম হয়েছে, আরেকটু পুষ্ট হলেই পাওয়া যাবে। সামনের সপ্তাহে আম ভালোভাবে পাওয়া যাবে। তবে এবার আমের দাম একটু বেশিই হবে। বানেশ্বর হাট ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমের হাট এখনও লাগেনি। জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হয়েছে, গুটি আম কিছু আসার কথা। কিন্তু সেই আম তো দেখতে পাচ্ছি না। আর এমনিতেই এবার আমের পরিমাণ কম। গাছে শুধু পাতা, আম নেই। অন্যবারের তুলনায় এবার চার ভাগের একভাগও বিক্রি হবে কি না সন্দেহ। তবে বাজার জমে উঠতে গোপালভোগ আম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা

রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহী জেলায় বাণিজ্যিক চাষি বেশি। তারা গুটি আম খুব একটা হার্ভেস্ট করে না। খুব বেশি যে গুটি আম চাষ হয় সেটাও না। এখানে যা হয় ব্রান্ডের আম। আর ম্যাংগো ক্যালেন্ডার সকলের সর্বসম্মতিক্রমেই ঘোষণা করা হয়েছে। আর একই জাত বা গাছের আম একেক সময় পাকে। যার গাছের আম পরিপক্ব সে পাড়বে, বলাই আছে অপরিপক্ব আম পাড়া যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে আম সংগ্রহ, পরিবহণ, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ-সংক্রান্ত সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আম চাষি, ব্যবসায়ী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় শেষে রাজশাহীর ম্যাংগো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, সকল প্রকার গুটি জাতের আম নামানোর কথা ছিল গত ১৫ মে থেকে। তবে ২০২৩ সালে ৪ মে ও ২০২২ সালে ১৩ মে গুটি জাতের আম নামানোর সময় ছিল। আবহাওয়ার কারণে এবার সময় পিছিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, গোপালভোগ, লকনা বা লক্ষণভোগ ও রানীপছন্দ আম সংগ্রহ করা যাবে আগামী ২৫ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম ১০ জুন, আম্রপালী ও ফজলি আম ১৫ জুন নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বারি আম ৪-৫ জুলাই, আশ্বিনা ১০ জুলাই ও গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে নামাতে পারবেন বাগান মালিকরা। তবে সবার শেষে ২০ আগস্ট থেকে বাজারে পাওয়া যাবে ইলামতি জাতের আম।