নওগাঁর পোরশায় আমন ধানের জমিতে কীটনাশক স্প্রে করে বিনষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময় উপজেলার খরপা গ্রামের মাঠে স্বর্না-৫ জাতের ধানে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এতে ৭ জন কৃষকের প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন আবু সাঈদ নামে এক ভুক্তভোগী কৃষক।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা যায়, গত ৩ বছর ধরে খরপা গ্রামের জামাল, সায়েম, কালাম, সালাম ও আবু সাঈদসহ ৭ জন তাদের আত্মীয়-স্বজন মিলে মাঠে ১০ বিঘা জমি চাষাবাদ করছেন। এ বছরও আমন মৌসুমে ওইসব জমিতে স্বর্না-৫ জাতের ধান রোপণ করেছেন। আর দেড়-দুই মাস পর ধান কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা ছিল।
কিন্তু তার আগেই গত রোববার রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষরা পুরো জমিতে ধানে আগাছানাশক কীটনাশক স্প্রে করেছে। এতে জমির সব ধানের গাছ শুকিয়ে গেছে। ধানের গাছ মরে যাওয়া হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। অর্থনৈতিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় আব্দুল মান্নান চৌধূরী, আব্দুল লতিফ ও ইসমাঈল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষক সেকেন্দার বলেন, গত সোমবার সকালে জমিতে ফসল দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখা যায়, জমিতে ধানের গাছ কোথাও সবুজ আবার কোথাও পাতা শুকিয়ে আছে। বেলা যত বাড়ছে ধানের গাছ ততই শুকিয়ে যাচ্ছে। একদিনের মধ্যে প্রায় সব জমির ধান শুকিয়ে মরে গেছে। এখন সবগুলো ধানের গাছও মরে গেছে।
আরেক কৃষক কালাম বলেন, প্রতি বিঘা জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা। দেড় মাস পরই এসব ধান ঘরে ওঠার কথা ছিল। প্রতি বিঘাতে ফলন পাওয়া যেত অন্তত ২০-২২ মণ। বর্তমানে ধানের দামও ভালো, ১৪০০-১৬০০ টাকা মণ। সেই ধান আর ঘরে উঠবে না।
অভিযোগকারী কৃষক আবু সাঈদ বলেন, আমরা ৩ বছর ধরে ওইসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষসহ অজ্ঞাত আরো ৫-৭ জন শ্রমিক দিয়ে ধানে আগাছানাশক কীটনাশক স্প্রে করে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমাদের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছি। তদন্তপূর্বক অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল মান্নান বলেন, ওই জমি চাচাতো ভাইদের। তারা নওগাঁ শহরে বসবাস করে এবং ওই জমি দেখভাল করে। যারা অভিযোগ করছে, তারাই জমি দখল করে ধান রোপণ করেছে। বর্গাদারদের তারা মারধর করে আহত করেছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। জমি দখল বা ফসল নষ্টের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্তা নাই।
উপজেলার মর্শিদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার সেলিম রেজা বলেন, জমিতে আগাছানাশক কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে। এতে জমির প্রায় ৭০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছে বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ২০-২২ মণ ফলন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ৫-৭ মণ ফলন হতে পারে। দ্বন্দ্বের কারণে ফসল নষ্ট করা মোটেও ঠিক হয়নি।
পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। ঘটনাস্থলে তদন্ত করার জন্য পুলিশ পাঠানো হবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।