গাইবান্ধায় ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা যেন থামছেই না। গত ৮ মাসে জেলায় শতাধিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার অধিকাংশই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও শিশু।
বিচারহীনতা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের হাতে স্মার্টফোনসহ ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে এসব ঘটনা বাড়ছে বলে জানান, স্থানীয় বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেত্রী ও স্থানীয়রা।
এদিকে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
জানা যায়, জেলায় প্রতি মাসেই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। জেলা হাসপাতালে ধর্ষণের ঘটনায় প্রতি মাসে গড়ে ভর্তি ও এ সংক্রান্ত পরিক্ষা করাচ্ছেন প্রায় ১৫ জন নারী ও শিশু।
জেলা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৭ উপজেলায় পহেলা জানুয়ারী থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১২০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩-১০ বছর বয়সের ১৪ জন, ১১-১৮ বছর বয়সের ৮৭ জন এবং ১৮ বছরের উর্ধ্বে ১৯ জন। সব থেকে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১-১৮ বছরের শিশু ও স্কুল-কলেজগামী কিশোরীরা।
নারী, শিশু ও মহিলা বিষয়ক সংগঠনগুলো বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফির কারণে জেলায় বাড়ছে ধর্ষণের মতো অপরাধের ঘটনা। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া বাড়ছে এসব ঘটনার সংখ্যা। জেলাজুড়ে এসব ঘটনা বন্ধে প্রশাসনের নজরদাড়ি বাড়ানো ও বিচারের দাবিতে সভা-সমাবেশ চললেও থামছে না এসব ঘটনা।
প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা বাড়ায় আতকিংত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা। সামাজিক এ ব্যাধি নিমূলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাইছেন তারা।
মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিক্তু প্রসাদ বলেন, অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র গাইবান্ধার সংগঠক কলি রানী বর্মন বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. শরিফুল আলম জানান, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সচেতন হতে হবে। পুলিশ একা নয়, অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, ১২০টি ধর্ষণের পাশাপাশি জেলায় গত ৮ মাসে ১৫৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ জেলায় ১৬২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং ২২২ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।