উজানের ঢলে গতকাল গভীর রাতে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ সময় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খোলা রেখেও ফ্লাড বাইপাস সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এ অবস্থায় জেলার ৫ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টানা ১৫ ঘণ্টা পর তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একই পয়েন্টে পানি কমে দুপুর ১২টা থেকে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এর আগে গতকাল রাত ১টায় একই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভাটিতে থাকা ৪ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে উজানে থাকা ফ্লাড বাইপাসসহ ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। গভীর রাতে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে প্লাবিত হয়।
এদিকে উজানের ঢল আসায় নদী তীরবর্তী মানুষের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে রাতে মাইকিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। বেশ কিছু এলাকায় ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফসলের ক্ষতিসহ গবাদী পশু নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েছেন প্লাবিত এলাকার মানুষজন। দুশ্চিন্তায় রাত পার করছেন তারা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রোববোর (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে নদীর পানি।
এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তীরবর্তী এলাকাগুলোর মানুষকে অগ্রিম জানানো হয়েছে, যেন তারা প্রস্তুত থাকে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন বলেন, বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে রোপা আমন, চিনা বাদাম ও শাকসবজির চাষ হচ্ছে। পানি যদি ৩-৪ দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে ১-২ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। আমরা চেষ্টা করছি, কৃষকদের ক্ষতি যেন কম হয়।