আলোচিত ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস,অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল, আজমল হোসেন খোকন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। সেদিনের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের বহু নেতা-কর্মী।
এই ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। প্রথমে তদন্তে গাফিলতি ও ‘জজ মিয়া নাটক’ তৈরির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২০০৮ সালে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে আরও ৩০ জনকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। পাশাপাশি ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন এবং সব আসামিকে খালাস দেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, এ মামলার তদন্ত সঠিক ও নিরপেক্ষ হয়নি। এ কারণে দণ্ড টেকসই হয়নি এবং সন্দেহের বাইরে আসামিদের দায় প্রমাণ করা যায়নি। আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, এত ভয়াবহ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়াটা দেশের জন্য দুঃখজনক।
হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। পরে আপিল বিভাগে শুনানি হয়। অবশেষে আজ আদালত সেই আপিল খারিজ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ই চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে।
এই রায়ের ফলে আলোচিত এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি হলো। প্রায় দুই দশক ধরে চলা এই মামলায় দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এখন সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে মামলার বিচারিক অধ্যায়ের শেষ টানা হলো।