রিসোর্টে প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়েই হাদিকে খুনের ছক কষেন ফয়সাল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে খুনের পরিকল্পনায় অংশ নেন চারজন। কিলিং মিশনের প্রধান শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান, তার প্রেমিকা মারিয়া আক্তার লিমা, সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন ও আরও এক নারী কীভাবে হাদিকে খুন করবেন সেই ছক কষেন।

গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ভোরে সাভারের মধুমতি মডেল টাউনের ‘গ্রিন জোন’ রিসোর্টে বসে এই গোপন ছক কষা হয় বলে ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি গোয়েন্দা দল সাভারের ওই রিসোর্টে তদন্ত চালিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে সাভারের ওই রিসোর্টে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। তদন্তকারীদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৫টা ২৩ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত রিসোর্টের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন ফয়সাল ও আলমগীরসহ চারজন।

এর আগে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মিরপুরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন রিসোর্টের নাইট ডিউটিতে থাকা কর্মী হাবিবুর রহমান সিয়ামের মাধ্যমে ২০৪ নম্বর কক্ষটি বুকিং দেন। রাত ৪টা ৮ মিনিটে আলমগীরের পরিচয়ে দুই নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে আলমগীর ও ফয়সালসহ ওই দুই নারী রিসোর্ট ত্যাগ করেন।

গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, ওই সময় কক্ষে হাদি হত্যাচেষ্টায় জড়িতরা একত্রিত হন এবং হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। তাদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও এখন গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে।
 
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় এক সাংবাদিককে তিনি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন যে, হাদির ওপর হামলার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে ফয়সাল ও আলমগীর মধুমতি মডেল টাউন থেকে বেরিয়ে যান। এ বিষয়ে ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তদন্ত করছে।

গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।

হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতিতে রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে রয়েছে।
 
এ মামলায় ফয়সালের মা-বাবা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ আটজনকে জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মঙ্গলবার ফয়সালের সহযোগী কবিরের ৭ দিন, সোমবার ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

এর আগের দিন রোববার গ্রেপ্তার হওয়া মোটরসাইকেল মালিক মো. আব্দুল হান্নানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।