লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের জুলেখা বেগম (৫৫) ও তার কলেজপড়ুয়া মেয়ে তানহা আক্তার মীম (১৯) হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর রহস্য উদঘাটন করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের দায়ী স্বীকার করছে আপন ফুফাতো ভাই পারভেজ। তাকে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ কারাগারে প্রেরণ করে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অভিযুক্ত পারভেজ রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর মহাধর বাড়ীর আব্দুল করিমের প্রবাস ফেরত ছেলে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি স্পেশাল টিম অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মেট্রোপলিটনের তুরাগ থানাধীন মনিরের গ্যারেজ থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সুপার জানান, অভিযুক্ত পারভেজ ২ মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। দেশে আসার পর অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। অভাবের তাড়নায় পারভেজ তার মামার বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেন। ঘটনার দিন পারভেজ তার সঙ্গে করে একটি চাকু নিয়ে মামার বাড়িতে যান। মামী জুলেখা ও মামাতো বোন মীম তাকে আমড়া-আপেল খেতে দেয়। এরপর পারভেজ মামাতো বোন মীমের সঙ্গে দ্বিতীয় তলায় যায়। হঠাৎ মীম পারভেজের কাছে চাকু দেখে চিৎকার দেয়। একপর্যায়ে মীমের সঙ্গে পারভেজের ধস্তাধস্তি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পারভেজ মীমের শরীরের বিভিন্নস্থান ও গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
দ্বিতীয় তলা থেকে পারভেজ নেমে তার মামীকে বলে মীম আপনাকে ওপরে ডাকছে। মামী কানে কম শুনতে পান। মামী ওপরে গেলে পেছন থেকে মাথায় প্লেট দিয়ে আঘাত করেন পারভেজ। মামী লুটিয়ে পড়লে পারভেজ টি-টেবিল দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
ঘাতক পারভেজ মামী ও মামাতো বোনের মৃত্যু নিশ্চিত করে আলমারি ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। তার গায়ের জামা-প্যান্ট খুলে ব্যাগে নেয়। মামাতো ভাই রাব্বির প্যান্ট-গেঞ্জি পরে বের হয়ে যান। সঙ্গে থাকা জামা-কাপড়ের ব্যাগটি রামগঞ্জের একটি খালে ফেলে দেন।
পারভেজ তার মামার বাসা থেকে বের হওয়ার ১০/১৫ মিনিট পর মাগরিবের আজান হয়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর পারভেজ লক্ষ্মীপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। পুলিশ জোরালোভাবে তদন্তে নেমে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্র, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টার মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর গ্রামের খামার বাড়িতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও মেয়ে মীম।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৃথকভাবে ২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।