জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার পথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিবাদন জানানো ছিল সৌজন্যতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রকাশ—এমনটাই মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
তিনি বলেন, সমালোচনার নামে কুৎসা রটনা করা একটি বদঅভ্যাস, যা থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
গত শুক্রবার তারেক রহমানের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রেক্ষাপটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে দাড়ান। সেখানে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সাময়িকভাবে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় গেট এলাকায় তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে এগোতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উপাচার্যকে বাঁধা দেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তারেক রহমানের সাথে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে গেলে তারেক রহমান হাত তুলে শিক্ষকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
এই ঘটনার পর শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান জানান, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে জনাব তারেক রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার পথে একজন নির্বাসন-ফেরা রাজনৈতিক নেতাকে অভিবাদন জানানো সৌজন্যতা ও সামাজিক শিষ্টাচারেরই অংশ। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের একজন সদস্য হিসেবে এই অভিবাদন ছিল সৌহার্দ্য, ঐক্য এবং পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে একত্রিত হয়ে দেশ গড়ার প্রত্যয় থেকে করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের অসহযোগিতার যে কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বরং পুলিশের সহযোগিতাতেই সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব তারাই পালন করেছে। গুজব ও অপপ্রচার আমাদের সামাজিক আচরণের অংশ হয়ে উঠছে—এটা উদ্বেগজনক।
গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জনাব তারেক রহমান যে ভূমিকা পালন করেছেন, তার প্রেক্ষাপটে তিনি শুভকামনা ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য। একজন মজলুম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে আসা ব্যক্তিকে সম্মান জানানো ছিল স্বাভাবিক ও ন্যায্য। তিনি আরও বলেন, সমালোচনার নামে কুৎসা রটনা করা একটি বদঅভ্যাস—এ থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শনিবার জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক শামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জামাল উদ্দীন সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল ২৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য জনসমাগম ঘটে। বৃহৎ জনসমাবেশে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে ছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা তদারকির অংশ হিসেবে উপাচার্য মহোদয়ও উপস্থিত ছিলেন। দুঃখজনকভাবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। আমরা মনে করি, কোনো ঘটনাকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংযত ও তথ্যভিত্তিক আলোচনা জরুরি। অসম্পূর্ণ তথ্য বা অল্প সময়ের ভিডিও ক্লিপের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত টেনে অপপ্রচার চালানো বা কটূক্তি করা সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল আচরণ নয়। তারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুজব, অপব্যাখ্যা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পরিহার করার অনুরোধ করেন।