খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান অচলাবস্থা কাটেনি। আড়াই মাস পর শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হলেও সপ্তম দিনেও শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরেননি। ফলে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী, যাদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এখন স্থবিরতা। ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা, ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের কোলাহল, ধুলায় ঢেকে আছে বেঞ্চ-চেয়ার। এই স্থবিরতার কারণ— গত ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষকদের অব্যাহত কর্মবিরতি।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে এক সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই ঘটনার জেরে শুরু হয় আন্দোলন, যার ধারাবাহিকতায় উপাচার্য ও উপউপাচার্য পদত্যাগে বাধ্য হন। পরবর্তীতে ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় প্রশাসন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ছিল— শিক্ষকদের সামাজিক মাধ্যমে হেনস্তা ও সাইবার বুলিং তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন এবং সহিংসতার ঘটনায় প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা।
কিন্তু এই উদ্যোগেও শিক্ষকদের অবস্থান বদলায়নি। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন না।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই একাধিকবার শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চাই, বিচারপ্রক্রিয়া হোক। কিন্তু সেই সঙ্গে যেন ক্লাসও চলে। বিচার পেতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আমরা চরম সেশনজটে পড়ব। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়বে।’
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। বিগত আড়াই মাসে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন— ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপপ্রচারে যুক্ত গ্রুপ ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও জানান, ‘আমরা সাত কর্মদিবস সময় দিয়েছি। তবে আশা করছি তার আগেই ইতিবাচক সমাধান আসবে।’
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, উপাচার্য ড. হজরত আলী নিয়মিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও ক্লাস কার্যক্রম চলছে না। প্রশাসন আন্তরিকভাবে সংকট নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।