ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় 

ইকসু গঠনের দাবিতে নতুন প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ইকসু গঠন আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির ক্যাফেটেরিয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি ও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সহ-সমন্বয়ক সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, সায়েম আহমেদ, জুবায়ের ইসলাম, হাসিব আল সজিব, রাকিবুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, জুলকারনাইন দোলন ও আহমাদ আলামিন।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রসমাজের সক্রিয় অবদান ছিলো অনস্বীকার্য। তবে বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য নিবেদিত ও নির্ভরযোগ্য কোনো প্লাটফর্ম এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠেনি। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করলেও তার বাস্তবায়ন খুবই কম এবং তার অগ্রগতি খুব একটা হয়নি বললেই চলে। প্রতিটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের জন্য বা ক্যাম্পাস সংস্কারের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করলেও রাজনৈতিক এজেন্ডা সমূহও এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে যেয়ে নিরেট শিক্ষার্থীদের জন্য যে সবসময় দাবি-দাওয়া উপস্থাপন এবং প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে কার্যকরী সমাধান করতে পারে সেরকম এমন একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ছাত্র সংসদ। কিন্তু অত্যন্ত হতাশা ও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ছাত্র সংসদ গঠন হয়নি। 

অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার ইকসু গঠনে অনীহা দেখিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি হলেও এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য উৎকৃষ্ট নেতা তৈরি করা। তবে বিভিন্ন সময় আমরা দেখতে পেয়েছি যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে। তুচ্ছ ঘটনায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিদ্যমান হিংসাত্মক মনোভাবের বিপরীতে কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হতে পারে ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন। 

বক্তারা আরও বলেন, নব্বই দশকের পর থেকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য, হল দখল, গেস্টরুম কালচার থামছেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন থাকায় শিক্ষকদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা গেলে যেমন সাধারণ ছাত্রদের অধিকার রক্ষা হবে, হয়রানি কমবে। ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারাও ছাত্র সংসদের মতো সম্মানিত জায়গায় আসীন হতে ছাত্রদের ওপর সদয় হবে। ছাত্র সংসদ গঠিত হলে কোনো একক রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে না, ফলে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কারো প্রতি জুলুম করতে পারবে না। তাছাড়া, ছাত্র সংসদের নেতারাও নিজেদের প্রয়োজনেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করতে বাধ্য হবে। 

ইকসু গঠনের আইন নেই - বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অবস্থানের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে দেয় না। শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা সমিতির নির্বাচন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদেরও নির্বাচন হয়; কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। আইনের দোহাই দেখিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠনে রাজি হচ্ছে না, একই ধরনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে না থাকা সত্বেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বেরোবি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এসময় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইকসু গঠনের দাবি জানান তারা।