দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মঞ্চে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এবার নারীরাও রাকসু নির্বাচনে মনোনয়নের মাধ্যমে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. নিশা আক্তার নারী বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম মনোনয়ন তুলেছেন।
নিশা আক্তার বলেন, ‘রাকসু হলো শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ করে নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সংকট ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। তাই তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে আমি রাকসুতে অংশ নিচ্ছি।’
নিশা আক্তার জানান, তিনি নির্বাচিত হলে নারীদের সুবিধার জন্য কাজ করবেন। বিশেষ করে হলের বাইরে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা, ক্যান্টিন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন, নারী নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং নেতৃত্ব বিকাশের উপর গুরুত্বারোপ করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নারী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হলেও পুরুষ শিক্ষার্থীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করবো। নারী-পুরুষ মিলিয়ে রাকসুর প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর।’
নিশা আক্তার রাকসুতে আসার কারণ হিসেবে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন নিরাপত্তার অভাব, বহিরাগতদের দ্বারা ইভটিজিং, মেস মালিকের হয়রানি। প্রসবকালে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে পারেন না, অথচ মেডিকেল সেন্টারে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। এছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য ভেন্ডিং মেশিনের অভাব, নিরাপদ পানীয় জল ও খাবারের সমস্যা রয়েছে।’
তিনি নারী শিক্ষার্থীদের রাকসুতে অংশগ্রহণ কম হওয়ার কারণও তুলে ধরেন। ‘নারীরা রাকসুকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম মনে করে, পুরনো রাজনৈতিক তিক্ততা ও সাইবার বুলিংয়ের ভয়ে তারা প্রচারণায় অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রশাসন নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি, ফলে অনেকে প্রার্থী হতে ভয় পাচ্ছেন।’
নিশার মতে, রাকসু হলো নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার। নারীরা রাকসুতে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া রাকসু শিক্ষার্থীদের রাজনীতি ও দেশের জন্য ভাবতে শেখায়।
তার নির্বাচনী ইশতেহারেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মূল দিক-
- আবাসিক হলের সংকট নিরসন, রিডিং রুম, ভেন্ডিং মেশিন ও মেডিকেল সেন্টার সংস্কার।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে ক্লাসরুম সংকট মোকাবেলা।
- নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- নারীদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষ সেল গঠন এবং নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার।
নিশা আক্তার বলেন, ‘রাকসুতে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তারাই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তুলবেন। আমি নারীদের জন্য নিরাপদ ও উন্নত পরিবেশ গড়ার কাজ করব। শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করাই আমার প্রথম অঙ্গীকার।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিশার এই উদ্যোগ ও উদ্যোগিতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনী মাঠে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে রাকসুকে আরও গণতান্ত্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আশা ব্যক্ত করছেন সবাই।