জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আট কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ডাকসু এবং হল সংসদে শিক্ষার্থীদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১০ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে প্রায় ৫৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ১০২ জন। ফলে মোট প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে।
ছাত্রীদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা-
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৭৯৮ জন এবং তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।
ছাত্রদের হলভিত্তিক ভোটার সংখ্যা-
আল বেরুনী হলে ২১০ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৮ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, জাতীয় কবি নজরুল হলে ৯৯২ জন এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন।
এদিকে নির্বাচনের অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার একটু আগে মওলানা ভাসানী হলের গেস্ট রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। প্যানেলের অভিযোগ, শিবির সমর্থিত প্যানেলকে জেতাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াতের সাথে আঁতাত করেছে।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা ও সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই ছাত্রদল ভোট বর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ আদিব।
এছাড়া কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’। বিকেলে জাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ন্যক্কারজনক ভূমিকা ও ছাত্র শিবিরকে ভোট জালিয়াতিতে সহযোগিতার প্রতিবাদে তারা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ মনোনীত প্যানেল শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, 'আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচন কমিশন যে ভোটার তার চেয়েও প্রায় দশ শতাংশ বেশি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে জানিয়েছে যদি কেউ ভুল করে তাহলে সেই হলে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।'
ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ‘ছাত্রদলের জাবি শাখার সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিকের নেতৃত্বে বিশ মাইল গেটে ছাত্রদল ও বিএনপির বহিরাগতরা অবস্থান করছে। তারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।'
জাকসুর মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকি ৭৫ শতাংশই ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হননি। জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মেয়ে দুজন। আর চারটি পদে কোনো মেয়ে প্রার্থীই নেই। সবগুলো হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থীর ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী। আর মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫ পদে প্রার্থীই নেই।
এবারের নির্বাচনে ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৮ প্রার্থী। নির্বাচনে বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট ৮টি প্যানেল অংশগ্রহণ করে।