সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাবনায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস

‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই দিনে তাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্মরণ করেছেন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায়।

শিক্ষার্থীদের মতে, শিক্ষক কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নন; তিনি একজন পথপ্রদর্শক, যিনি সমাজ ও জাতি গঠনে রাখেন অপরিসীম অবদান।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাহিমা বেগম স্মৃতি জানান, ‘শিক্ষক জাতির কারিগর। তারা শুধু পাঠ্যবই পড়ান না, বরং আমাদের জীবনের পথচলায় আলোর দিশা দেখান। খুব যত্ন করে, ধৈর্য নিয়ে, আমাদেরকে গড়ে তোলেন একজন সচেতন ও নৈতিক মানুষ হিসেবে। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে আজ অনার্সের শেষ প্রান্তে এসে বুঝতে পারছি আমার প্রতিটি সাফল্যের পেছনে শিক্ষকদের নিবেদিত পরিশ্রম ও দিকনির্দেশনার অবদান কতটা গভীর। সবশেষে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সকল শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।’

সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লিখন হোসেন বলেন, শিক্ষক শুধু জ্ঞান দেন না, মানুষ গড়েন। সমাজে মূল্যবোধ, মানবতা ও চিন্তার আলো ছড়ান তারাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত তবুও তারা জাতি গঠনের অগ্রভাগে আছেন।

প্রযুক্তির যুগে শিক্ষকের ভূমিকা বদলেছে, কিন্তু গুরুত্ব কমেনি। এখন তারা শুধু তথ্যের উৎস নন, বরং তরুণদের চিন্তা করতে শেখান, সঠিক পথ দেখান।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেছিলেন- 'শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।' কিন্তু বাস্তবে সেই মেরুদণ্ডকেই আমরা অনেক সময় উপেক্ষা করি। শিক্ষকরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ সম্মান, সুযোগ-সুবিধা বা ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৈষম্যও দৃষ্টিকটু। আজকের দিনে তাই শ্রদ্ধা হোক প্রতিটি শিক্ষককে, যারা অন্ধকারে আলোর দিশা দেখান।

ব্যাবস্হাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীর জাহিদ হাসান জানান একজন শিক্ষক শুধু বইয়ের জ্ঞানই দেন না, বরং আমাদের জীবন গঠনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। তারা আমাদের ভালো-মন্দ চিনতে শেখান, স্বপ্ন দেখতে ও তা পূরণের পথ দেখান। আমি মনে করি, একজন আদর্শ শিক্ষক সমাজের প্রকৃত আলোকবর্তিকা। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই আমার জীবনের প্রতিটি শিক্ষককে, যারা আমাকে সঠিক পথে চলতে শিখিয়েছেন। শিক্ষকদের সম্মান জানানো শুধু এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিদিন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমার বিশ্বাস, শিক্ষকদের সম্মান করলে শিক্ষা আরও ফলপ্রসূ হয় এবং সমাজ এগিয়ে যায় আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীর সূচনা হালদার জানান, আজ শিক্ষক দিবস। এই বিশেষ দিনে আমরা আমাদের প্রিয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষকদের  প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের শিক্ষকেরা শুধু বইয়ের জ্ঞানই দেন না, বরং জীবনের পথচলায় দিকনির্দেশনা দেন। তারা আমাদের আপনজনের মতো যত্ন নেন, আদর করেন এবং ভুল করলে সঠিক পথে ফিরিয়ে দেন।তাদের নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও ভালোবাসার কারণেই আমরা ভবিষ্যতের পথে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।শিক্ষক দিবসে তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক প্রণাম ও শ্রদ্ধা জনাই।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী  ফাহিমুল ইসলাম জানান,শিক্ষক দিবসে শিক্ষককে নিয়ে যে চিন্তা আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই চিন্তার বীজটিও আমার মস্তিষ্কে রোপণ করেছেন আমার শিক্ষকই। মায়ের কোলে প্রথম বর্ণ শেখার পর সেই বর্ণগুলোকে শব্দে, বাক্যে, জীবনের অর্থে রূপ দেওয়াটা শিক্ষকই আমাদের শিখিয়েছেন। শিক্ষক শুধু পাঠ শেখান না, শেখান ভাবতে, বুঝতে, গড়তে।জীবনের গতিপথে দিক পরিবর্তনের শক্তি যদি কারও হাতে থাকে, তবে সে নিঃসন্দেহে শিক্ষক। তিনি এমন এক নির্মাতা, যিনি কাদামাটিকে মানুষে রূপ দেন। তার স্নেহময় ছোঁয়ায় অজানার ভয় মিলিয়ে যায়, জেগে ওঠে সম্ভাবনার অসীম স্বপ্ন। শিক্ষক আমাদের জীবনের প্রথম আলো, যিনি অন্ধকারেও শেখান আলোর ভাষা।

সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী  আবিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়; এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য।’

শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেন শিক্ষক সমাজের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাক, তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন হোক। কারণ, শিক্ষকেরাই জাতি গঠনের ভিত্তি, তাদের হাতেই নির্ভর করছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।