হুমায়ুন ফরিদীকে হারানোর ১৩ বছর

কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অভিনেতা। আজ এ তারকার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। দর্শক, ভক্ত আর শুভানুধ্যায়ীদের হৃদয়ে তিনি এখনো বেঁচে আছেন।

হুমায়ূন ফরীদি ১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৬০ বছর বয়সে ঢাকার ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন এই অভিনেতা।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে আগমন করেন। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। হুমায়ুন ফরীদি খল চরিত্রে অভিনয় করলেও ইতিবাচক চরিত্রেও তার অভিনয় ছিল অতুলনীয়। শুধু সিনেমা নয়, টেলিভিশন নাটক এবং মঞ্চেও তাঁর অভিনয় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন দর্শকরা।

তিনি মাতৃত্ব চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাংলাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি তাঁর পড়াশুনা সম্পন্ন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। 

সেলিম আল দ্বীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের তক্ষক চরিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ‘নীল নকশার সন্ধানে’ নাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম টেলিভিশন নাটক। এরপর তিনি ভাঙ্গনের শব্দ শোনা যায়,সংশপ্তক, দুই ভাই, শীতের পাখি এবং কোথাও কেউ নেই- দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন।

মায়ের অধিকার, বিশ্ব প্রেমিক, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, টাকার অহংকার, আনন্দ অশ্রু, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়াসহ অনেক উল্লেখযোগ্য সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। 

হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’। সিনেমাটি শুরু হয় ২০০৯ সালে, কিছু বিরতির পর ২০১১ সালে সিনেমাটির শুটিং শেষ হয়। অবশেষে ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট সিনেমাটি সারা দেশের ৬০টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি।

উল্লেখ্য, হুমায়ুন ফরিদী অনেক মেধাবী ও শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন। তিনি নিজের চরিত্রকে এতো অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে দর্শকরাও হারিয়ে যেতেন সেই অভিনয়ের মায়া জালে। কখনো নায়ক, কখনো খলনায়ক, কারো কাছে আদর্শ, কারো কাছে উপমা ছিলেন তিনি। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অভিনয় জগতের প্রত্যেকটি আঙিনায়। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেছেন তিনি। তিনি মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন।