যৌথ প্রযোজনার 'আশিকী' সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় আসা ঢালিউডের অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। দেশজুড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে গত দুই দিন আলোচনায় রয়েছেন অভিনেত্রী। থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে রোববার (১৮ মে) বেলা ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেই থেকে নতুন করে ঘুরে ফিরে আলোচনায় নুসরাত ফারিয়া। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ, আদালত, কারাগার মিলিয়ে অভিনেত্রীর জীবনের প্রায় ৫২ ঘণ্টা সময় কেমন কেটেছে তা জেনে নিন এই প্রতিবেদন।
যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়
রোববার থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান নুসরাত ফারিয়া। চেকপোস্টে তাকে প্রথমে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাটারা থানায়। এরপর নেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখানে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। পরে জানা যায়, ভাটারা থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
২৩ ঘণ্টার পর কারাগারে
জিজ্ঞাসাবাদের পরদিন সকাল ১০টায় কড়া নিরাপত্তায় নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। শুনানি চলে প্রায় আধা ঘণ্টা। নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২২ মে তারিখ ধার্য করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কাঠগড়ায় ছিলেন ৩০ মিনিট
নুসরাতকে যখন আদালতে নেওয়া হয়, তখন আদালত চত্বরে ছিলো উপচে পড়া ভিড়। আদালতের কাঠগড়ায় পুরোটা সময় নির্বাক ছিলেন অভিনেত্রী। পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন, যেন এই চিত্রনায়িকার জামিনের পক্ষে জমা দেওয়া ভিসা সংক্রান্ত নথি যাচাই করা হয়।
কারাগারের ২৪ ঘণ্টা
আদালতের আদেশের পর নুসরাত ফারিয়াকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তার ও হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে পাঠানো নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে হঠাৎ শোনা যায় নুসরাত ফারিয়ার জামিনের খবর। তার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন আদালতে আবারও জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জামিন মঞ্জুর করেন। কারাগারে জামিনের কাগজ পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে যায় দুপুর সাড়ে ১২টা। এরপর কাগজ যাচাই-বাছাই করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় তার স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন কারাগারের বাইরে। আরও অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে কারও সঙ্গে কথা বলেননি নুসরাত। কালো কাঁচের প্রাইভেটকারে চেপে কারাগার এলাকা ছেড়ে যান তিনি।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফেসবুক পোস্ট
কারাগার থেকে বের হয়ে বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া লেখেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য আজ কথা বলতে পারিনি। সুস্থ হয়ে খুব দ্রুত ফিরে আসব আপনাদের মাঝে। একই পোস্ট এডিট করে বিকেল ৪তা ৫৩ মিনিটে লেখেন, জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন। মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। তবে এই সময়টাতে যারা সর্বক্ষণ আমার পাশে ছিলেন সেসব মানুষদেরকে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমার সহকর্মী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির সবাই, এমনকি আপামর সাধারণ মানুষ যারা আমার হয়ে কথা বলেছেন, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন, পাশে থেকেছেন তাদের এই সাপোর্ট/ভালোবাসা আমি আজীবন মনে রাখবো। আপনারা পাশে না থাকলে হয়ত এত দ্রুত আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারতাম না।
সোচ্চার সহশিল্পীরা
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর অধিকাংশ শিল্পী নীরব থাকলেও, তাকে কারাগারে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও এই শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন তারা। সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন, তমা মির্জা, পরিচালক আশফাক নিপুণসহ আরও অনেকে ফেসবুকে নুসরাতের মুক্তি চেয়ে পোস্ট করেন।