‘বাবা দিবসে’ উপহার আর ভালোবাসাকে সঙ্গী করে হত ছোটখাট পারিবারিক আয়োজন। বাবাহীন জীবনে এই দিনটি তার কাছে এখন কেবল স্মৃতি। বাবাকে শেষবারের মত উপহার দেওয়া শার্টটা স্মৃতিতে বিরাট জায়গা নিয়ে আছে অভিনেতা বুলবুল আহমেদের মেয়ে অভিনেত্রী তাজরিন ফারহানা ঐন্দ্রিলার কাছে।
বাবা বেঁচে থাকতে ‘বাবা দিবস’ নিয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা করতেন ঐন্দ্রিলা, আর এখন এই ‘বাবা দিবস’ এলে দিনটি কষ্টে কাটে এই অভিনেত্রীর।
ঐন্দ্রিলা বলেন, বাবা দিবসের আয়োজন নিয়ে প্রস্তুতি থাকত আগে থেকেই, আব্বুকে কী গিফট দিব, কী আয়োজন করব, কী রান্না করব এসব নিয়ে। ছোট থেকে আব্বুকে পাঞ্জাবি গিফট করা হত। যখন একটু বয়স হল, অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন তখন প্রিন্টের হাওয়াই শার্ট দিলে তিনি খুব খুশি হত। বিভিন্ন রংয়ের শার্ট দিতাম সেগুলো আনন্দ নিয়ে পরতেন।
বুলবুল আহমেদের জীবদ্দশায় তাকে নিয়ে কাটানো শেষ ‘বাবা দিবসের’ স্মৃতি তুলে ধরেন ঐন্দ্রিলা। বাবা সিবসের ঠিক এক মাস পরেই চলে যান বুলবুল আহমেদ।
আব্বু মারা যাওয়ার আগে শেষ বাবা দিবসে আমি যে শার্টটা দিয়েছিলাম সেই শার্টটা আমার কাছে এখনো আছে। আব্বু মারা যাওয়ার পর আমি ওইটা নিয়ে ঘুমাতাম। বাবা দিবসে সেই শার্টটা পরে আব্বু বলেছিল 'আমি আর বাঁচব না রে মা'। তখন আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছিলেন। তার এক মাস পরেই ১৫ জুলাই আব্বু চলে যান। আমি কখনো বুঝিনি সেটাই আমাদের শেষ বাবা দিবস। ছোটবেলায় বাবা দিবস আনন্দের ছিল। আর এখন বাবাহীন বাবা দিবস কষ্টে কাটে।
ঐন্দ্রিলা বলছেন, বাবার সিদ্ধান্তই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আমার ইচ্ছা ছিল ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে পড়ার। কিন্তু আব্বু চেয়েছিলেন তিন ছেলেমেয়ে তিন ধরনের বিষয়ে পড়ুক। তাই বললেন আমি যেন কমার্স নিয়ে পড়ি। এখন বুঝি, সেটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।
পরবর্তীতে বাবার ইচ্ছাতেই তিনি ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাবার নির্মাণের অনুপ্রেরণা এসেছে তার মধ্যে।
আব্বু চাইতেন আমি নির্মাণে আসি। এখন আমি দুইটা প্রফেশনে যুক্ত অভিনয় আর নির্মাণ তো আছেই, পাশাপাশি পড়াশোনা সাবজেক্ট অনুযায়ী মার্কেটিং নিয়ে আন্তজার্তিক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি।
বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা নিজেও এক সময়ে নাটকে নিয়মিত মুখ ছিলেন। পাশাপাশি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও গানও করেন তিনি।
‘রূপনগর’, ‘মোহর আলী’, ‘জীবন কাহিনী’, ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘অভিমানে অনুভবে’, ‘সাংসারিক ভালোবাসা’সহ বেশ কয়েকটি নাটক তিনি অভিনয় করেছেন ঐন্দ্রিলা। তবে এখন অভিনয়ে ঐন্দ্রিলার দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে।
১৯৫৮ সালে মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু বুলবুল আহমেদের। আবদুল্লাহ আল-মামুনের ‘পূর্বাভাস’ নাটক দিয়ে টেলিভিশনে তার অভিষেক হয় ১৯৬৮ সালে।
‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘ইডিয়ট’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘টাকায় কি না হয়’, ‘মালঞ্চ’, ‘হৈমন্তী’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘সারাদিন বৃষ্টি’, ‘রূপনগর’, ‘সারাবেলা’সহ তিন শতাধিক নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বুলবুল আহমেদ।
জহির রায়হানের উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’তে অভিনয় করে নজরে আসেন তিনি। ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’তে তার অভিনয়ের প্রশংসা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের নাটকে ব্যস্ততার জন্য এর মধ্যে ১০ বছরের ব্যাংকিং পেশা ছেড়ে অভিনয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন তিনি।
বুলবুল আহমেদ সিনেমায় নাম লেখান ১৯৭৩ সালে, আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) ‘ইয়ে করে বিয়ে’ সিনেমার মাধ্যমে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘মোহনা’, ‘মহানায়ক’, ‘ওয়াদা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দেবদাস’, ‘ভালো মানুষ’, ‘বদনাম’, ‘দুই জীবন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ ইত্যাদি। এর মধ্যে পরিচাক চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'দেবদাস' সিনেমায় দারুণ খ্যাতি কুড়ান বুবলবুল আহমেদ।
২০১০ সালের ১৫ জুলাই মারা যান এই অভিনেতা।