এক সময়ের ভাইরাল তারকা, ‘তেরি মেরি কহানি’ খ্যাত রানু মণ্ডলের বর্তমান অবস্থা দেখে শিউরে উঠছেন অনেকে। রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে এসে বলিউডে গান গাওয়া এই গায়িকার জীবন এখন সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে আটকে আছে।
২০১৯ সালে কলকাতার রানাঘাট রেল স্টেশনে গান গেয়ে ভাইরাল হন রানু মণ্ডল। পরে বলিউড গায়ক ও সুরকার হিমেশ রেশমিয়ার ‘হ্যাপি হার্ডি অ্যান্ড হীর’ ছবিতে প্লেব্যাকের সুযোগ পান। তাঁর কণ্ঠে ‘তেরি মেরি কহানি’ গানটি রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। অংশ নেন বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতেও। কিন্তু জনপ্রিয়তার সেই ঢেউ খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
প্রথমে ভাইরাল হওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই রানু পুরনো ভাঙা ঘর ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ২০২০ সালের করোনা মহামারীতে সব কিছু বদলে যায়। বলিউডে আর কোনো কাজ পাননি তিনি। চলমান কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়, উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তাকে ফিরতে হয় রানাঘাটের সেই পুরনো, প্রায় পরিত্যক্ত বাড়িতে।
সেই বাড়ি এখন বসবাসের অনুপযোগী। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, বৃষ্টিতে ঘর ডুবে যায়। বাসার চারপাশে আগাছায় ভরা, জানালা-দরজার বেশিরভাগই ভাঙা। সেই ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতেই দিন কাটছে রানুর।
বর্তমানে রানুর কোনো উপার্জনের উৎস নেই। আশপাশের মানুষ কিংবা দূর-দূরান্ত থেকে কেউ দেখা করতে এলে খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসেন। তা দিয়েই চলে তার দৈনন্দিন জীবন। স্থানীয়রা জানান, মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় রানু কারও সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না, অনেক কথা মনে রাখতেও পারেন না।
রানুর পতনের কারণ হিসেবে অনেকেই তার আচরণকে দায়ী করছেন। ভাইরাল হওয়ার কিছুদিন পর এক ভক্ত ইভেন্টে রানুকে ছুঁয়ে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন, সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করেন, সেই ‘উদ্ধত আচরণ’-ই তার জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়।
এক সময়ের ভালোবাসা যেন পরিণত হয় বিদ্বেষে। খ্যাতির শিখরে থাকা রানু কিছু দিনের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন একা, উপেক্ষিত।
রানু মণ্ডলের জীবনের এই উত্থান-পতনের গল্প যেন সোশ্যাল মিডিয়ার তারকাদের বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। নেটদুনিয়ার আলো যত দ্রুত কাউকে আলোচনায় আনে, তত দ্রুতই আবার তাকে আঁধারে ঠেলে দেয়।