কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫

জেনিফার লরেন্সের গাউন নিয়ে বিতর্ক

কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ এ অংশ নিতে গিয়ে জেনিফার লরেন্স এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

শনিবার (১৭ মে) রেড কার্পেটের ওপর হাঁটার সময় তিনি একটি সাদা স্ট্র্যাপলেস মাল্টি-টিয়ার গাউন পরেন, যা মুহূর্তেই শিরোনামে উঠে আসে। তবে, এই গাউনটি শুধু তার সৌন্দর্য এবং স্টাইলের জন্য নয়, বরং কান ফেস্টিভ্যালের নতুন ড্রেস কোডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আলোচনায় এসেছে।

নতুন ড্রেস কোডের সীমা ছাড়ানো
কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবার নতুন ড্রেস কোড চালু করা হয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত দীর্ঘ ট্রেইন, ফুল, ওভারসাইজ পোশাক এবং সঠিক মানের ড্রেসের প্রতি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু জেনিফার লরেন্সের গাউনটি এই নতুন নিয়মের সীমানা ছাড়িয়ে যায়। তার পোশাকের ট্রেইন ছিল অত্যন্ত দীর্ঘ, যা তার চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং পেছনে এমন এক দীর্ঘতা তৈরি করেছিল, যা সাধারণত কান উৎসবের ড্রেস কোডের পরিপন্থী বলে মনে করা হয়।

যদিও অনেকেই তার গাউনকে স্টাইলিশ এবং সাহসী হিসেবে প্রশংসা করেছেন, তবে বেশ কিছু দর্শক ও ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এটি কান ফেস্টিভ্যালের নতুন নিয়মের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখায়নি। কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এবং ফ্যাশন ব্লগার তার গাউনের ট্রেইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা কান ফেস্টিভ্যালের নতুন শৃঙ্খলা ও স্টাইল গাইডলাইনকে অগ্রাহ্য করছে।

পোশাকের সৌন্দর্য এবং ভিন্নতা
জেনিফার লরেন্সের পোশাকের সৌন্দর্য ও ফ্যাশন নিয়ে কোনো বিতর্ক না থাকলেও, তার গাউনের প্রতিটি দিক নিঃসন্দেহে আলাদা নজর কেড়েছে। গাউনটির প্লিটেড বডিস তার শরীরের কাঠামোকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে এবং কোমরের কাছে একটি স্যাশ যুক্ত ছিল, যা তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। নিচের অংশের স্তরিত নকশা এবং অ্যাসিমেট্রিকাল কাটের কারণে পোশাকটি দেখতে ছিল ভিন্ন ধরনের, যেন কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত এক শিল্পকর্ম।

এটি শুধুমাত্র একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্টই ছিল না, বরং এক ধরনের সাহসী পদক্ষেপ যা কান উৎসবের স্টাইলিংয়ের প্রতি লরেন্সের পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। তার গাউনটি স্টাইল, সমকালীনতা এবং বৈচিত্র্যের এক চমৎকার মিশ্রণ ছিল।

মেকআপ এবং স্টাইল
লরেন্সের মেকআপ ছিল অত্যন্ত মার্জিত এবং ফ্যাশনেবল। তার সোনালি চুলগুলো সোজা রেখে একটি নিম্ন বান করে বাঁধা ছিল, যা তার মুখাবয়বকে আরও স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল করে তোলে। চোখে হালকা গোলাপি শেড এবং ঠোঁটে একটি উজ্জ্বল লাল রঙের লিপস্টিক, তাকে দিয়ে এক ক্লাসিক এবং আধুনিক গ্ল্যাম তৈরি হয়েছিল।

এছাড়া, তার পায়ের নিচে স্ট্র্যাপি কালো হিল ছিল যা পুরো লুকটিকে আরও পরিমার্জিত এবং সুষম করে তোলে। তবে, সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল তার গাউনের দীর্ঘ ট্রেইনটি নিয়ে, যা কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

সহ-অভিনেতার সঙ্গে রেড কার্পেট মুহূর্ত
অপরদিকে, তার সহ-অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসনও কান রেড কার্পেটে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। দু’জনের উপস্থিতি এক চমৎকার মূহূর্ত তৈরি করেছিল। প্যাটিনসন তার গাঢ়ো রঙের একটি স্যুট এবং সাদা শার্টে ছিলেন, যা তার সঙ্গে লরেন্সের সাদা গাউনের সঙ্গতি বজায় রেখেছিল। দুই তারকার রসায়ন এবং ফ্যাশন সেন্টিমেন্ট একত্রে উৎসবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

ফটোকল স্টাইলও ছিল আলাদা
রেড কার্পেটের পরে, ১৮ মে, লরেন্স ‘ডাই, মাই লাভ’ সিনেমার জন্য ফটোকলে অংশ নেন। সেখানে তার পোশাক ছিল একদম আলাদা- একটি হালকা ক্রিম রঙের ঢিলেঢালা গাউন, যা ছিল বোহেমিয়ান স্টাইলের। পোশাকের ওপর ছিল পুঁতি দিয়ে তৈরি ফুলের নকশা এবং স্কার্টের ড্রপ-ওয়েস্ট ডিজাইন। এই লুকের মধ্যে ছিল প্রাকৃতিক ও আরামদায়ক শৈলী, যা কান ফেস্টিভ্যালে তার আগের দিন করা গ্ল্যামারাস রেড কার্পেট লুকের সঙ্গে একটি তীব্র কনট্রাস্ট সৃষ্টি করে।

ফটোকলে, তিনি হালকা মেকআপ এবং খোলা, ঢেউ খেলানো চুলে ছিলেন, যা তাকে আরও তরতাজা এবং প্রাকৃতিক দেখিয়েছিল। তার এই নতুন লুকটি আবার এক ধরনের নতুন ফ্যাশন বিবৃতি হয়ে ওঠে।

ডাই, মাই লাভ
‘ডাই, মাই লাভ’ সিনেমাটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং এটি উৎসবের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত প্রিমিয়ারগুলির একটি। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন লিন রামসে, যিনি এর আগে ‘র‍্যাটক্যাচার’ এবং ‘ইউ ওয়্যার নেভার রিয়ালি হিয়ার’ এর মতো প্রশংসিত চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।

এই সিনেমায় জেনিফার লরেন্স এবং রবার্ট প্যাটিনসন একটি বিবাহিত দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এটি একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ড্রামা, যেখানে লরেন্স গ্রেস নামক চরিত্রে অভিনয় করছেন। গ্রেস একজন নবজাতক সন্তানের মা, যিনি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

জেনিফার লরেন্স নিজের অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘ডাই, মাই লাভ’ সিনেমায় কাজ করা ছিল তার জন্য একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, কারণ তিনি সম্প্রতি তার প্রথম সন্তানের মা হয়েছেন এবং পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। সিনেমার চরিত্রের সঙ্গে তার এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গভীর সম্পর্ক ছিল, যা তার অভিনয়কে আরও বাস্তব এবং অনুভূতিপূর্ণ করে তোলে।

বলা প্রয়োজন যে জেনিফার লরেন্সের কান ২০২৫-এর এই দু’টি পোশাকই ছিল একেবারে আলাদা ধরনের স্টাইল স্টেটমেন্ট। তার প্রথম গাউনটি একদিকে কান ফেস্টিভ্যালের নতুন ড্রেস কোডের নিয়ম ভেঙে বিতর্কের সৃষ্টি করলেও, অন্যদিকে তার সাহসী এবং ভিন্নধর্মী স্টাইলের জন্য প্রশংসিত। এই কান উৎসবের উপস্থিতি তাকে শুধু ফ্যাশন জগতেই নয়, চলচ্চিত্রের দুনিয়াতেও আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে- এটি নিশ্চিত।

এছাড়া, তার পরবর্তী দিনের বোহেমিয়ান লুকও ছিল প্রশংসনীয় এবং এক নতুন ধারার ফ্যাশন এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করেছে।