শিক্ষার্থীদের করুণ মৃত্যু বারবার চোখ ভিজে গেছে: দিলারা জামানের

‘বাচ্চাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। কান্না থামাতে পারছি না। কী দেখছি এসব! ছবি–ভিডিও। এমন দৃশ্য দেখে গা শিউরে উঠছে। নিজেও তো একজন শিক্ষক ছিলাম। শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের এমন মৃত্যুতে কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষিকার মৃত্যু আমাকে পোড়াচ্ছে।’ কথাগুলো অভিনয়শিল্পী দিলারা জামানের। 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় সঙ্গে আলাপে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুর্ঘটনা নিয়ে এভাবে কষ্টের কথা জানালেন দিলারা জামান।

অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান নিজেও শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি অভিনয়ে পরে নিয়মিত হন। আশি পেরোনো দিলারা জামান এখনো অভিনয় করে চলেছেন। ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা দিলারা জামান জানালেন, তাদের আসা–যাওয়ার পথ মাইলস্টোন স্কুল–কলেজের সামনে দিয়ে। কী সুন্দর ভবন! বললেন, ‘সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় স্কুল–কলেজের বাচ্চাদের দেখতাম। ওদের কলকাকলিতে মুখর থাকত আশপাশ।

কিন্তু গতকাল (সোমবার) বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে কেমন যেন পরিবেশ হয়ে গেছে। কোনো ছবি, ভিডিও দেখতে পারছি না। আমি ১২ নম্বর সেক্টরের মাঠে হাঁটতে যাই। সেখানে দুই দিন ধরে শুধু মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা। শিক্ষার্থীদের করুণ মৃত্যু মাঠে আসা সবাইকে স্তব্ধ করেছে। বারবার চোখ ভিজে গেছে আমারও।’

ঢাকা–চট্টগ্রামের চারটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন দিলারা জামান। ২৬ বছরের শিক্ষকতায় তিনি বাংলা পড়াতেন। সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন তার শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের অনেকে দেশ–বিদেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত। দিলারা জামান বলেন, ‘উত্তরা থেকে ঢাকায় যেতে হলে ওই রাস্তাটা দিয়ে যাই আমরা। মাইলস্টোন বিরাট একটা কমপ্লেক্স করেছে, ওটা দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন যেন পুরো পরিবেশ কেমন হয়ে গেছে। আমার মেয়ে কানাডা থেকে দেশে এসেছে। সে বলল, আম্মা, তুমি একটু বাইরে যাও। পরে আমি আমার বাসার রাস্তার উল্টো দিকে যে ১২ নম্বর সেক্টরের পার্ক আছে, ওখানে গিয়ে বসলাম সবার সঙ্গে। সবারই মন খারাপ। আমার তো আরও বেশি খারাপ লাগছে, আমি নিজেও শিক্ষক ছিলাম। যেভাবে একজন শিক্ষিকা বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন। আসলে শিক্ষকেরা তো সব সময় বাচ্চাদের জন্য নিবেদিত থাকেন, নিজের সন্তানের মতো বাচ্চাদের ভালোবাসেন।’

দিলারা জামান সর্বশেষ শিক্ষকতা করেন ঢাকার নামকরা স্কুলে। জানালেন, দলাদলির কারণে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। অভিনেত্রী দিলারা জামানের দাপটের কাছে শিক্ষিকা দিলারা জামান অভিমান নিয়ে দূরে সরে গেলেন। অভিমান নিয়েই আছেন, দূরে থেকে দেখছেন।