বিগত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তীব্র এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দেশের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। কারণ তাদের জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন তীব্র এই গরমে বাহিরে বের হতে হচ্ছে। ফলে হিটস্ট্রোকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে তারা। বিগত কয়েক দিনে দেশে হিটস্ট্রোকে যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করেছে শ্রমজীবী মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা।
তীব্র এই দাবাদাহ এখনও বিরাজ করায় প্রচণ্ড রোদে বাইরে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশে বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড এই রোদে ধানক্ষেতে কাজ করায় তাদের মধ্যে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।
হিটস্ট্রোকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সারা দেশে মারা গেছে ৮ জন। এদের মধ্যে ৬ জনই শ্রমিক। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিজ মরিচখেতে কাজ করার সময় সামশুল আলম (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়। তার ভাতিজা ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র গরমে খেতে কাজ করার সময় হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশনে মোটরসাইকেলচালক মিরাজ (২৭) হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে মারা যান। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বরগুনার তালতলীতে পুকুর খননের সময় হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয় আরেক শ্রমিক মো. নয়া মিয়া ফকিরের (৫০)। নিহতের ভাই সোবাহান ফকির বলেন, গ্রামের হাসান মিয়ার বাড়িতে পুকুর খননের সময় হিটস্ট্রোক করেন নয়া মিয়া ফকির। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া কুমিল্লার বুড়িচং ও বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুই শ্রমিক, বগুড়ার শেরপুরে কৃষক, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বৃদ্ধ ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে এক শিক্ষক হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
এদিকে তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির আশায় কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, ফেনী, জয়পুরহাট, রাজবাড়ী ও বরিশালে নামাজ পড়েছেন স্থানীয়রা। পরে আল্লাহর রহমত কামনা করে দাবদাহ থেকে মুক্তি এবং বৃষ্টির জন্য মোনাজাত করা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার (২৪ এপ্রিল) মোংলায় সর্বোচ্চ ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। খুলনা বিভাগের জেলাগুলোসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এসব জেলায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। বাকি জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। আজও একই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের শরীরে বেশি অস্বস্তি লাগছে। অনেকে এই অস্বস্তি সহ্য করতে পারেন না। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে তিনি জানান, আজ অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। বুধবারের মতো আজও তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকবে। সিলেট অঞ্চল ছাড়া আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বেশি বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।